JustPaste.it

তাযকিয়া

 

মাওলানা আসেম ওমর রাহিমাহুল্লাহ

 

 

অনুবাদক

মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

 

 

পরিবেশনায়

আস সাইফ মিডিয়া

 

 

 

 

 

 

 

____________________________________________

 

আল ইহ্দা

 

ফিলিস্তীনের যুবকেরা! যাদের বুকের রক্ত টগবগ করছে জেরুজালেমকে ইহুদিদের হাত থেকে মুক্ত করতে।

 

___________________________________________

 

 

 

 

        

 

 

 

সূচিপত্র

 

 

দরসে তাযকিয়া: উজব এবং খোদপছন্দ

০৫

দরসে তাযকিয়া: গীবত এবং চোগলখুরি

২৩

হে উম্মাহ! আল্লাহর সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হোন

৩৪

দরকার সফরের দৃঢ়তা: গন্তব্য সামান্য দূরে

৪৮

এক মহাসাগরের ঝড়ের অপেক্ষায়!

৬৩

 

 

 

দরসে তাযকিয়া

উজব এবং খোদপছন্দ

 

 

الحمد لله العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين، اما بعد أعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا وَقَدْ خاب مَن دَسَّاهَا     

                        

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلا مَا    رَحِمَ رَبِّي  وقال سبحانه وتعالي :

وقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ : لَيْسَ عَدُوُّكَ الَّذِي إِذا قَتَلَكَ أَدْخَلَكَ الْجَنَّةَ ، وَإِذَا قَتَلْتَهُ كَانَ لَكَ نُورًا ، أَعْدَى عَدُو لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

 

সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর, যার পরে আর কোন নবী নেই। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে ৷

আল্লাহ তাআলা মুজাহিদ সাথীদের উপর অপরিসীম দয়া ও রহমতের আচরণ করেছেন যে, তিনি তাঁদেরকে দ্বীনের জন্য জান ও মাল উৎসর্গ করার তাওফিক দান করেছেন। ফিতনার এই যুগে দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে বের করে আল্লাহর প্রশস্ত জান্নাতের দিকে অগ্রসর হওয়ার প্রতি পথপ্রদর্শন করেছেন। সমস্ত প্রশংসা সেই পবিত্র সত্ত্বার জন্য।

কিন্তু আমার প্রিয় ভাইয়েরা! আপনারা যেমনটি জানেন যে জিহাদ ওই পবিত্র ইবাদত, যার দ্বারা ইবলিসের কোমর ভেঙ্গে যায়। কেননা জিহাদ ইবলিসের রোপণ করা অপবিত্র গাছের ডালপালার পরিবর্তে তার মূল কেটে দেয়।

 

 

এই মোবারক আমলের মাধ্যমে কুফুরি শাসনব্যবস্থার গাছের মূলোৎপাটন করা হয়। এবং আল্লাহর জমিনে আল্লাহর শরীয়তের পবিত্র গাছ রোপণ করা হয়, যাতে আল্লাহর বান্দারা এই গাছের ছায়ায় নির্ভয়ে জিন্দেগীর প্রতিটি শাখায় শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত করতে পারে। সুতরাং মানবতার শত্রু ইবলিস এটা কিভাবে বরদাশত করতে পারে যে, কোনো মুসলমান দুনিয়াতে তার পাতানো জাল থেকে বেরিয়ে জিহাদের মতো মহান পথের পথিক হয়ে যায়?

সে মুসলমানদেরকে জিহাদ থেকে বাধা প্রদানের জন্য সব ধরনের মেহনত করে। জিহাদ থেকে পিছনে সরানোর জন্য তাঁর সামনে অযৌক্তিক তাবীল বা ব্যাখ্যা, নতুন নতুন ওজর এবং আকলি দালায়েলের স্তূপ লাগিয়ে দেয় এবং সেগুলোকে তার এজেন্টদের মাধ্যমে এতোটা ব্যাপক করে দেয় যে, লোকেরা এতে বিভ্রান্তিতে পতিত হয়।

কিন্তু এরপরও যদি কোন মুসলমান আল্লাহর ফজলে জিহাদে বের হয়ে পড়ে, তখন সে তাঁর জিহাদকে নষ্ট করার জন্য সম্ভাব্য সব ধরণের প্রচেষ্টা ব্যয় করে। কিন্তু ইবলিসের চাইতে বড় দুশমন মানুষের নফস। যাকে মানুষ সর্বদা নিজের সাথে চলাফেরা করে।

যেমন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَعْدَى عَدُوٌّ لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

“তোমাদের সবচে' বড় দুশমন তোমাদের নফস, যা তোমাদের পার্শ্বে রয়েছে।”

এবং এই নফস আসলেই অনেক বড় দুশমন। ইবলিসের চাইতেও বড় দুশমন। কেননা ইবলিস যে انا خير منه অর্থাৎ “আমি আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠ” [সুরা আ'রাফ: ১২] বলেছিল, তার কারণ তো এই নফস-ই ছিল!

সুতরাং যেমনিভাবে মুজাহিদ জিহাদের ময়দানে তার বাহ্যিক শত্রুর ব্যাপারে সর্বদা চৌকান্না থাকে, কোথায় গুপ্তঘাঁটি আছে, এবং কোথায় আশঙ্কা আছে সে জানে, এই নফসও এমন জিনিস, যার ব্যাপারে সর্বদা চৌকান্না থাকতে হবে।

এই নফসের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের দিকে ইশারা করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

 

لَيْسَ عَدُوُّكَ الَّذِي إِذَا قَتَلَكَ أَدْخَلَكَ الْجَنَّةَ

“তোমাদের শত্রু সে নয় যে, তোমাকে হত্যা করে, কারণ তার এই হত্যা করা তো তোমাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয়,” অর্থাৎ তার এই হত্যা করার কারণে যদি তুমি শহীদ হও, তাহলে জান্নাতে চলে যাবে।

وَإِذَا قَتَلْتَهُ كَانَ لَكَ نُورًا

“আর যদি তুমি তাকে হত্যা করে দাও, তাহলে এই হত্যা করা কিয়ামতের দিন তোমার জন্য নূর হয়ে যাবে।”

বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَعْدَى عَدُوٌّ لَكَ نَفْسُكَ الَّتِي بَيْنَ جَنْبَيْكَ

“তোমাদের সবচে' বড় শত্রু তোমাদের নফস, যা তোমাদের পার্শ্বে রয়েছে।”

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا. وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا

“যে নিজেকে শুদ্ধ করে সেই সফলকাম হয়। এবং যে নিজেকে কলুষিত করে, সে ব্যর্থ মনোরাথ হয়”। [সুরা শামস: ৯-১০]

পুরো জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহ তাআলা এই বাক্যের মাঝে বর্ণনা বলে দিয়েছেন। যে ওই ব্যক্তি সত্যিই কামিয়াব হয়ে গেলো, যে আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের মাধ্যমে পবিত্র করে নিয়েছে এবং সেই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে, যে এই নফসকে গুণাহের মাঝে ধুলোমলিন করে ফেলেছেন। এই বাক্যের মাঝে পুরো জান্নাত ও জাহান্নামকে বলে দেওয়া হয়েছে।

এই নফসের স্বভাব-প্রকৃতি কি? কুরআনে কারিমে সে দিকে ইশারা করে ইরশাদ হয়েছে-

 

إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي

বাস্তবতা হলো এই যে, “নফস সর্বদা মন্দের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয় শুধুমাত্র

ওই ব্যক্তি ছাড়া যার উপর আমার রবের রহমত রয়েছে।”

এই নফস কিভাবে মানুষের উপর আক্রমণ করে? আলিম হোক বা আবিদ, মুজাহিদ বা মুহাজির প্রত্যেকের উপর তার মেজাজ এবং স্বভাব-প্রকৃতি অনুযায়ী এই নফস আক্রমণ করে। তার সহজ শিকার গাফেল ব্যক্তি হয়ে থাকে।

যে এই নফস থেকে গাফেল হয়ে গেলো, সে যেখানে থাকুক, যদি হারাম শরীফে ইবাদতগুজার আবেদ, অথবা লড়াইয়ের ময়দানে যুদ্ধরত মুজাহিদও গাফলতের শিকার হয়ে যায়, তাহলেও এই নফসের হামলা কামিয়াব হয়ে যায়। এর হামলা থেকে বাঁচতে পারবে না।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

الكيس من دان نفسه وعمل لما بعد الموت 

“বুদ্ধিমান হল ওই ব্যক্তি যে, নিজের নফসের হিসাব গ্রহণ করে।”

নিজেই নিজেকে পবিত্র না মনে করে। এই নফসের হামলাসমূহ থেকে গাফেল না হয়ে যায়। এবং মৃত্যুর পরের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। এমন ব্যক্তি হচ্ছে বুদ্ধিমান।

والعاجز من اتبع نفسه هواها وتمنى على الله

“অক্ষম হচ্ছে ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে খাহেশাতের গোলাম বানিয়ে দেয়। এতদসত্ত্বেও আল্লাহ তাআলা থেকে অনেক আশা রাখে।” 

ফুজাইল বিন আয়াজ রহ, আল্লাহ তাআলার এই বাণী  ولا تقتلوا انفسكم অর্থাৎ যে তোমরা নিজেদের নফসকে হত্যা করো না” [সুরা নিসা: ২৯]। এর ব্যাখ্যায় বলেন- لا تغفلوا عن انفسكم “অর্থাৎ নিজেদের নফসের ব্যাপারে গাফেল হইয়ো না!” কেননা من غفل عن نفسه فقد قتلها যে নিজের নফস থেকে গাফেল হয়েছে, সে তাকে হত্যা করেছে। ইবলিসের প্ররোচনায় নিজের প্ররোচিত হওয়াটা অনুধাবন হয়, কিন্তু নফসের দ্বারা তার প্ররোচিত হওয়ার বিষয়টা সহজে অনুধাবন হয় না। সুতরাং প্রত্যেক সাথীর নফসের হিলা-বাহানাসমুহ সম্পর্কে অবগত হওয়া উচিত, যেমনিভাবে তারা নিজেদের বাহ্যিক শত্রু সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকেন।

নফসের হামলাসমূহের মধ্যে অত্যন্ত গোপন ও খতরনাক হামলা হচ্ছে উজব বা খোদপছন্দির হামলা। বিশেষত এই যুগে, যে যুগের ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

يعجب كل ذي رأي برأيه

“এই যুগে এই হামলা থেকে বাঁচা অতীব জরুরী।”

উজব অর্থ হচ্ছে মানুষ মনে মনে নিজের ইলম, তাকওয়া, অর্থ ও প্রসিদ্ধি, শক্তি ও মেধার ব্যাপারে এভাবে খুশী হয় যে, সে এটাকে নিজের পরিপূর্ণতা মনে করে, এবং এর সম্পর্ক আল্লাহ তাআলার দিকে করে না, চাই এই নেয়ামত দুনিয়াবি হোক অথবা দীনী, যতক্ষণ এটা তার অন্তরেই থাকে ।

আর যদি এই খুশি অন্তর থেকে বের হয়ে কোন আমলে প্ৰকাশ পায়, মুখে প্রকাশ পায়, তাহলে তো এটাকে তাকাব্বুর বলা হবে। উজব ততক্ষণ বলা হবে, যতক্ষণ তা অন্তরেই থাকবে।

এই উজবের ব্যাপারে কত ভর্ৎসনা এসেছে! এর কতই না ক্ষতি রয়েছে!

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. উজবের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-

 العجب ان تراان عندك شيئاليس عند غيرك

উজব ইহাকে বলে যে, আপনি এমনটি মনে করবেন যে, আপনি এমন নেয়ামতের মালিক, যা অন্য কারো কাছে নেই। এবং হযরত মুহাসাবি রহ. বলেন-

العجب هو حمل النفس علي ما عملت او علمت و نسيان ان النعم من الله عز و جل

নিজের ইলম বা আমলের ব্যাপারে স্বীয় নফসের প্রশংসা করা এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নেয়ামত এই কথা ভুলে যাওয়াই হচ্ছে উজব।

ইমাম গাজ্জালি রহ. বলেন-

العجب هو استعظام النعمة والركون اليها مع نسيان اضافها للمنعم

নিজের কাছে বিদ্যমান কোন নেয়ামতকে বড় কিছু মনে করা, এবং উহার দিকে এভাবে ঝুঁকে থাকা যে, এই নেয়ামতকে আল্লাহ তাআলার দিকে সম্পর্কিত করা থেকে ভুলে যাওয়া।

সুতরাং উজব বা খোদপছন্দি এই দিক থেকে গোপন হামলা যে, এটাকে অনুধাবন করা সহজ কোনো কাজ নয়। কেননা খোদপছন্দির সকল খেয়াল বা ধারণা মুখে আসা ব্যতীত অন্তরেই রয়ে যায়। এবং অন্তরের পর্দায় এতো দ্রুত অতিক্রম করে যে, আল্লাহ যাকে এর থেকে হেফাজত রাখবেন, সেই হেফাজত থাকবে। অন্যথায় নফস আমাদের সাথে

 

কি করে গিয়েছে সে অনুধাবনও করতে পারবে না। আবেদ তাঁর ইবাদতের ব্যাপারে, আলিম তাঁর ইলমের ব্যাপারে, শক্তিমান তাঁর শক্তির ব্যাপারে নফসের শিকার হয়ে খোদপছন্দিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

বরং হয়রান হয়ে যাওয়ার মতো বিষয় হল এই যে, নফসের এই হামলা কোন দুর্বল আমলদার ব্যক্তিকেও ছেড়ে দেয় না। বরং আপনারা এই জমানায় দেখবেন যে, যার কাছে কিছুই নেই, তাকেও খোদপছন্দির এই হামলায় আক্রান্ত দেখা যায়।

এটাই কারণ যে সাহাবায়ে কেরাম রা. ও তাবেইন এটা থেকে বাঁচার ব্যাপারে অনেক গুরুত্ব দিতেন।

হাফেজ ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন- যে ব্যক্তিই নফসের এই কথাকে খোদপছন্দির দৃষ্টিতে দেখলো, অর্থাৎ নিজের নফসের আমলে খুশি হয়েছে, সে অবশ্যই তাঁর এই আমলকে ধ্বংস করে দিয়েছে।

হযরত আতা রহ. বলেন- অনেক গুণাহ যা অপরাগতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করে দেয়, তা ওই নেক কাজ থেকে উত্তম, যা উজব এবং তাকাব্বুর সৃষ্টি করে।

যখন মানুষ তার নফসের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যায়, এবং এটা ভাবতে থাকে যে, সে তো অনেক ভালো এবং দ্বীনদার হয়ে গিয়েছে। এর অর্থ হল এই যে, এই ব্যক্তি তার নফসের জালে ফেঁসে গিয়েছে। এখন তার নফস তাকে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যাবে। সে তাকে দিয়ে তার সকল খাহেশাত পূর্ণ করাবে। কখনো তো দ্বীনের নামেই পূরণ করাবে, কিন্তু তাকে নিশ্চিন্ত রাখবে যে, আপনি তো অনেক দ্বীনদার এবং আমলদার লোক! এভাবে নফস তাকে ধ্বংসের মাঝে ফেলে দিবে।

কুরআনে কারিম এই দৃষ্টিভঙ্গির তিরস্কার করছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন -

فَلا تُرَكُوا أَنْفُسَكُمْ هُوَ أَعْلَمُ يمَن القَى.

“তোমরা নিজেদেরকে পাক-পবিত্র হিসেবে সাব্যস্ত করো না, যারা মুত্তাকী আল্লাহ তাআলা তাঁদের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন।” [সুরা নাজম: ৩২]

 

সুরা নিসা'তে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُرَكُونَ أَنفُسَهُم بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلا.

“আপনি কি ওই লোকদের দেখেননি, যারা নিজেদেরকে পাক-পবিত্র বলছে, বরং আল্লাহ যাকে চান পাক বানিয়ে দেন, এবং তাদের উপর সূতা পরিমাণও জুলুম করা হবে না।” [সুরা নিসা: ৪৯]

আল্লাহ তাআলার কাছে কার কি গুরুত্ব আল্লাহ তাআলা তা ভালো করেই জানেন। দুনিয়াবাসি তো বাহ্যিক সাজসজ্জা দেখে থাকে, কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দার আমলের ব্যাপারে গাফেল নন।

 

সুতরাং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

 

رب أشعث أغبر مدفوع بالأبواب.

“অনেক লোক রয়েছে দুরাবস্থায় ও দুঃখে জর্জরিত, ধুলায় ধূসরিত। লোকেরা তাঁদেরকে নিজেদের দরজায় দাড়াতেও দেয় না।”

কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁদের মর্যাদা কেমন?

لو أقسم على الله لأبره.

“যদি তারা কোন ব্যাপারে আল্লাহর কসম খায়, আল্লাহ তাঁদের কসমকে পুরো করে দেন।”

আল্লাহ তাআলার কাছে তাঁদের গুরুত্ব এমনই।

সুতরাং নিজের কোন আমলের উপর গর্ববোধ করা, স্বীয় মেধা, ইলম ও তাকওয়ার ব্যাপারে গর্ববোধ করা, এবং কাউকে নিচু মনে করা। গর্ববোধ করার প্রথম দরজাই এটা যে, সে অন্যকে নিচু মনে করে থাকে। কিন্তু আল্লাহ তাআলাই জানেন- هو اعلم اتقى আল্লাহ ভালো করেই জানেন, আল্লাহ তাআলা আমাদের চেয়েও অধিক ভালো জানেন যে, মুত্তাকী কে! আল্লাহকে ভয়কারী কে!

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. স্বীয় কিতাব “আয যুহদ” এ লিখেছেন –

“হযরত সুলাইমান আ. লোকদের সাথে বৃষ্টি বর্ষণের দুয়া করতে বের হলেন। তিনি এক পিঁপড়ার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, যে তার পা আসমানের দিকে উল্টিয়ে শুয়ে বলছিল, হে আল্লাহ! আমরা আপনার মাখলুকদের মধ্য থেকে একটি মাখলুক, আমরা আপনার রিজিকের মুখাপেক্ষী, হয়তো আপনি আমাদের পানি দিন অথবা আমাদের ধ্বংস করে দিন! এটা শুনে সুলাইমান আ. লোকদের বললেন “চলো! ফিরে চলো! অন্য কারো দোয়ায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়ে যাবে”। আল্লাহ তাআলার কাছে কার কি গুরুত্ব, আল্লাহ ই ভালো জানেন।

সুতরাং হে আমার সাথীরা! উজব এই যুগে খুবই খতরনাক একটি জিনিস। বিভিন্ন ধরণের হিলা-বাহানা দ্বারা, বিভিন্ন ধরণের কলাকৌশলের দ্বারা, বিভিন্ন ধরণের মারপ্যাঁচ ব্যবহার করে মানুষের উপর নফস আক্রমণ করে বসে।

এর উপশম ও এর বিরোধিতা হচ্ছে তাওয়াজু, আল্লাহ তাআলার জন্য নিজে নিজেকে ছোট মনে করা। অন্য মুসলমানদের নিজের চাইতে উত্তম মনে করা, এটাই হচ্ছে উজবের উপশম বা ঔষধ।

কেননা বান্দা যদি অন্তরে তার হাকিকতের অনুভূতি রাখে, তার শক্তিসামর্থ তার জেহেনে থাকে যে, সে কি ছিল? তার হাকিকত কি? তাকে কি দিয়ে বানানো হয়েছে? তাহলে তো আর অন্তরের মাঝেই বড়ত্ব সৃষ্টি হবে না। নিজের কোন আমলের উপর গর্ববোধ করবে না! আল্লাহ যদি কোন নেয়ামত দেন, তাহলে সে এটার উপর বড়ত্ব প্রকাশ করবে না। অবশ্যই সে তার হক হিসেবে সাব্যস্ত করবে না, বরং সে উহাকে আল্লাহ তাআলার দিকেই সম্পৃক্ত করবে! এবং অন্তরে তাওয়াজু রাখবে। আর যখন অন্তরে তাওয়াজু, তখন তো আর তাকাব্বুরও আসবে না।

ওই পবিত্র নফসগুলো, যাদের ব্যাপারে কুরআনে কারিমে رضي الله عنهم ورضي الله عنه এর’১ ঘোষণা করা হয়েছে, ওই পবিত্র নফসগুলো, যারা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরীক্ষা ও মসিবতে সাহায্য করেছেন, এবং মক্কায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে যাননি, যারা তাঁর সাথে হিজরত করেছেন, বদর লড়াইয়ে তাঁর সাথে শরীক হয়েছেন, এবং সমস্ত রণাঙ্গনে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে শরীক ছিলেন। তাঁদের কি অবস্থা দেখুন!

______________________________________________________

১.সাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে এই আয়াতটি সুরা বাইয়িনাহ সহ একাধিক সুরায় এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে “আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।

 

হজরত আবু বকর রা. বলতেন-

لو يعلم الناس ما أنا فيه أهالوا على التراب

“যদি তারা আমার হাকিকত সম্পর্কে অবগত হয়, তাহলে আমার উপর মাটি নিক্ষেপ করবে,”

আমার মুজাহিদ সাথীগণ! আপনারা কি মনে করছেন এটা শুধুমাত্র একটি লৌকিকতাপূর্ণ বাক্য ছিল? তাঁরা তো সাদামাটা মনের মানুষ ছিলেন, যা তাঁদের অন্তরে থাকতো, তাই তাঁদের জবানে আসতো। তাঁরা নিজেদেরকে এমনটাই মনে করতেন। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সমুন্নত করে দিয়েছেন।

হযরত আনাস বিন মালিক রা. বলেন-

একদিন আমি দেখলাম আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব রা. কোন একদিকে যাচ্ছেন। আমিও তাঁর পিছু পিছু চললাম, আমি দেখলাম, তিনি একটি বাগানে প্রবেশ করলেন এবং বাগানের মাঝে দাঁড়িয়ে অর্থাৎ যখন তিনি নিশ্চিন্ত হলেন যে, কেউ তাঁকে দেখছে না,  তাঁর কথা কেউ শুনছেন না, তখন তিনি নিজের নফসকে লক্ষ্য অরে বলছেন-

عُمَرُ أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ بَحْ بَحْ وَاللهِ بَنِي الْخَطَّابِ لَتَتَّقِيَنَّ اللّهَ أَوْ لَيُعَدَّ بَنَّك.

“বাহ! বাহ! আমিরুল মুমিনিন, উমর ইবনুল খাত্তাব! আল্লাহর কসম! হে খাত্তাবের বেটা! আল্লাহকে ভয় করো! অন্যথায় তিনি তোমাকে অবশ্যই শাস্তি দিবেন।”

কখনো নিজেকে সম্বোধন করে বলতেন “হে খাত্তাবের বেটা! আজ তুমি আমিরুল মুমিনিন, অথচ কালকে যখন তোমার বাবা তোমাকে উট চড়াতে পাঠাতো, তখন উট ক্ষুধার্ত আসতো আর তোমার পিতা তোমাকে প্রহার করতো! তুমি উটও চড়াতে পারতে না!”

তাঁরা আল্লাহর দেওয়ানা ছিলেন, যে তাওয়াজু তাঁদের অন্তরে এমনভাবে বসা ছিল যে, তাঁদের প্রত্যেক আমলে তাওয়াজু প্রকাশ পেত। ইহা লৌকিকতা ছিল না।

হযরত আবু বকর রা. হলেন রফিকে গার বা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের সাথী।

হযরত খাব্বাব রা. বলেন- হযরত আবু বকর রা. নিজের ঘরে ছিলেন, গাছের ডালে কোন কবুতর বা চড়ুই এসে বসলো। আবু বকর রা. তাঁকে দেখলেন এবং বললেন-

طُوبَى لَكَ يَا طَيْرُ ، مَا أَنْعَمَكَ عَلَى هَذِهِ الشَّجَرَةِ.

“হে পাখি! তোকে মোবারকবাদ! কি চমৎকার, তুই গাছের ডালে বসছিস!”

تَأْكُلُ مِنْ هَذِهِ الثَّمَرَةِ ، ثُمَّ تَمُوتُ.

“তুই ফল খাচ্ছিস, উড়ছিস! এবং একদিন মরে যাবি!”

ثُمَّ لا تَكُونُ شَيْئًا.

“অতঃপর আর কিছুই বাকি থাকবে না! অর্থাৎ তোর কোনো হিসাব হবে না!”

لَيْتَنِي مَكَانَكَ.

“হায়! আমি যদি তোর জায়গাতে হতাম!”

তুই সেই হিসাবের দিন থেকে বেঁচে গিয়েছিস, হায় যদি আমি তোর জায়গায় হতাম!

তিনিই হচ্ছেন রফিকে গার, সিদ্দিকে আকবর। দেখুন তাওয়াজু অন্তরের মাঝে! এমনই উমর ফারুক রা. এর হালত ছিল।

একদিন উমর রা. মাটির একটি টুকরা উঠালেন, এবং বললেন হায় যদি আমি এই ইটের মতো হতাম! হায় যদি আমার মা আমাকে জন্ম না দিতো, হায় যদি আমি কিছুই না হতাম! হায় যদি আমার কোন নাম নিশানাই না থাকতো!

এই মহান মনীষীদের তাওয়াজুর এই আশ্চর্য অবস্থা ছিল, যারা তাঁদের জিন্দেগী হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে কুরবান করে দিয়েছিলেন। যারা তাঁদের গর্দান স্বীয় মনিবের গর্দান মোবারক, এবং নিজেদের বুক স্বীয় মনিবের দেহ মোবারক বাঁচাতে ঢাল বানিয়ে দিয়েছিলেন।

সুতরাং মেরে দোস্ত! অন্তরে যদি তাওয়াজু থাকে, তাহলে সেই অন্তরে আর উজব সৃষ্টি হবে না! অন্যদের উপর বড়ত্ব দেখানো, নিজেকে অন্যদের চাইতে বড় প্রমাণ করা, মসজিদ ও মাহফিলসমূহে নিজেকে প্রদর্শন করা, এই সব কিছু উজব এবং তাওয়াজু না থাকার দরুণ হয়ে থাকে। খোদপছন্দির কারণে হয়ে থাকে, এ কারণেই অন্তরে অন্যদের ব্যাপারে নিচুতা সৃষ্টি হয়।

যখন নিজেই নিজেকে বড় মনে করতে থাকবে, যখন নিজেই নিজেকে মুত্তাকী মনে করতে থাকবে, যখন নিজেই নিজেকে মেধাবী এবং সাহসী মনে করতে থাকবে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই অন্যদের ব্যাপারে নিচুতা/তুচ্ছতা সৃষ্টি হবে, যাতে মুহাব্বাত শেষ হয়ে যায়, লেনদেনের ক্ষেত্রে অমর্যাদা এবং পরস্পর বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়ে যায়। এটা এমন খতরনাক রোগ!

আমার ভাইয়েরা! চিন্তা করার বিষয় হল, যদি নিজেকে বড় মনে করার দ্বারা মানুষ বড় হয়ে যেতো, তাহলে তো এই জমিনে শুধু অহংকারীরাই জীবিত থাকতো! নিজেকে বড় মনে করার দ্বারা কেই বা বড় হয়ে গেছে!?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

مَنْ تَوَاضَعَ لِلَّهِ دَرَجَةً يَرْفَعْهُ اللهُ دَرَجَةً، حَتَّى يَجْعَلَهُ فِي أَعْلَى عِلِّيِّينَ.

“যে ব্যক্তি মাখলুকের সামনে আল্লাহ তাআলার জন্য এক স্তর তাওয়াজু অবলম্বন করলো, আল্লাহ তাআলা তাঁকে স্তরে স্তরে মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন। এমনকি তাঁকে ইল্লিনের সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছে দিবেন।”

وَمَنْ يَتَكَبَّرْ عَلَى اللهِ دَرَجَةً يَضَعْهُ اللهُ دَرَجَةً، حَتَّى يَجْعَلَهُ فِي أَسْفَلَ السَّافِلِينَ.

“আর যে ব্যক্তি মাখলুকের সামনে স্বীয় বড়ত্ব প্রদর্শন করে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে পর্যায়ক্রমে নিচু ও অপমানিত করতে থাকবেন, এমনকি তাকে সাফিলিনের (জাহান্নামের) সবচে' নিম্নস্তরে পৌঁছে দিবেন।”

একদিন হযরত উমর ফারুক রা. মিম্বারে তাশরিফ রেখে বলেন-

یا ايها الناس تواضعوا

“হে লোকসকল! তাওয়াজু অবলম্বন কর!” .. কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইরশাদ করতে শুনেছি-

مَنْ تَوَاضَعَ لِلهِ رَفَعَهُ اللهُ، فَهُوَ في  نَفْسِهِ صَغِيرٌ

এটা আশ্চর্য একটা হাদিস! যে আল্লাহর জন্য ছোট হবে, আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন। যদিও সে নিজেকে স্বীয় দৃষ্টিতে ছোটই মনে কর থাকে।

এটা আল্লাহ তাআলার সবচে' বড় নেয়ামত। সাহাবায়ে কেরাম রা. কে আল্লাহ তাআলা এই মর্তবা দান করেছিলেন।

ইরশাদ করেছেন-

وَفِي أَعْيُنِ النَّاسِ عَظِيمٌ

কিন্তু লোকদের দৃষ্টিতে মহান হবে।”

এবং ইরশাদ করেছেন-

وَمَنْ تَكَبَّرَ وَضَعَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ ، فَهُوَ فِي أَعْيُنِ النَّاسِ صَغِيرٌ ، وَفِي نَفْسِهِ كَبِيرٌ .

“যে তাকাব্বুর করবে, নিজেকে বড় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে নিচু করে দিবেন। সুতরাং সে লোকদের দৃষ্টিতে ছোটই হবে, যদিও সে নিজেকে মনে মনে বড় করে।”

নফস তার অন্তরে এই সকল ধারণা সৃষ্টি করতে থাকে, রোপণ করতে থাকে যে, আপনার চাইতে তো ভালো কেউ নেই, আপনার চাইতে তো উত্তম মশওয়ারা কেউ দিতে পারে না। আপনার চাইতে ভালো কথাবার্তা কেউ বলতে পারে না। আপনার চাইতে ভালো ইবাদত কেউ করতে পারে না। আপনার মতো ইলমওয়ালা তো ভূখণ্ডে পাওয়াই যায় না। নফস মানুষের সাথে এভাবে খেলা করে। কিন্তু হাকিকতটা কি?

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

وَحَتَّى لَهُوَ أَهْوَنُ عَلَيْهِمْ مِنْ كَلْبٍ أَوْ خِنْزِيرٍ.

“হাকিকত হল এই যে, সে লোকদের নিকট কুকুর অথবা খিঞ্জিরের চাইতেও মন্দ হয় থাকে।”

কিন্তু নফসের হামলা দেখুন! নফসের সুক্ষ্ম কর্ম দেখুন! তাকে কেমন বড় বানিয়ে দিয়েছে যে, তার নজরে দুনিয়াই দাঁড়াতে পারে না! নফস মানুষকে এভাবেই ধোঁকায় ফেলে রাখে। তার দৃষ্টিতে তার জাতকে এমন উঁচু বানিয়ে দেয় যে, তার দৃষ্টিতে বাকি সবাই গতকালের বাচ্চা হয়ে যায়। অথচ বাস্তবতা কি হয়ে থাকে, আপনারা এই হাদিসে শুনেছেন।

এটা কেন হয়, তাওয়াজু না থাকার কারণে হয়, যদি তাওয়াজু থাকতো, তাহলে মুআমালা এর উল্টো হতো। যেদিন জবান অথবা কোন বাহ্যিক চমকের দ্বারা কেউ বড় হতো, তাহলে কায়সার ও কিসরার পতন কখনোই আসতো না। দুরাবস্থা, ও ধুলায় ধূসরিত পোশাক, ছিটেফাটা জুতা, মাটিতে উপবেশনকারীদের পদতলে তাদের মুকুট দলিত হতো না ।

কোথায় কায়সার আর কিসরা আর কোথায় আরবের বদ্দুরা! যদি ঠাস ঠাস কথাবার্তা ও চিকন চিকন কথাবার্তায় কেউ বড় হয়ে যেতো, তাহলে উপমহাদেশ ও আন্দালুস (স্পেন) এর মুসলিম সালতানাত অধঃপতনের শিকার হতো না। কেননা দরবারী পরামর্শদাতারা তাঁদের চিকন চিকন কথাবার্তায় এই বাদশাহদেরকে সর্বদা শাহজাহান বানিয়ে রাখতো! তাদের কথাবার্তায় সেই শাসকদের বাদশাহির কখনোই পতন আসতো না।

এর বিপরীত রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর জান কুরবানকারীদের দেখুন! তাকাল্লুফ, লৌকিকতা ও বানোয়াট বিষয় থেকে মুক্ত কথাবার্তা, তালি লাগানো পোশাক। সাদাসিধা খানা, সাদামাটা ঘর, সাদামাটা মসজিদ এবং সাদামাটা জীবন যাপন। কিন্তু যখন উঠেন, তো কায়সার ও কিসরার শান শৌকত, ঠাটবাট পদদলিত করে এগিয়ে চলেন এবং নিজেদের হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন পদ্ধতি দুনিয়া ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

আপনারা কি ইমারাতে ইসলামী আফগানিস্তানের দরবেশদের দেখেননি? আধুনিক সভ্যতার রঙ্গিন দুনিয়া থেকে বেখবর, লৌকিকতা ও কৃত্তিমতা থেকে দূরে, কাঁচা মসজিদ, সেই কাঁচা মাদারেস, এই চাটাইয়ের উপর বসেই দুই সুপার পাওয়ারকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। নিজে নিজে বড় হয়ে কে বড় হতে পারে?

বাহ্যিক তাকাল্লুফ ও রংঢং দেখিয়ে কেই বা বড় হয়ে যায়? যে আল্লাহ তাআলার জন্য তাওয়াজু অবলম্বন করবে। রহমাতুল্লিল আলামিনের ফরমান আজো তরুতাজা আছে।

مَنْ تَوَاضَعَ لِلهِ رَفَعَهُ اللهُ

অন্যথায় আপনি দেখুন, কোথায় একদিকে মুসলিম বিশ্ব, এ্যাটোম বোমার অধিকারী জাতিসমূহ, আরব পেট্রোলের সম্পদের অধিকারী, কিন্তু কাফের দরজায় তাদের শক্তি কি? কাফেরদের সম্মুখে তাদের কিই বা শক্তি? এবং এই দরবেশদেরও দেখুন! এই মাটিতে উপবেশনকারীদেরও দেখুন! এদের কাছে তাদের গুরুত্ব কতটুকু! এবং ওই পশ্চিমা বিশ্ব এদের কাছে কেমন আবেদন করছে সংলাপ ও আলোচনার জন্য। জান বাঁচানোর জন্য।

সুতরাং হে আমার মুজাহিদ সাথীগণ! অন্তর থেকে তাওয়াজু বের হয়ে যাওয়া, এবং উজব ও খোদপছন্দি এসে যাওয়া মুজাহিদদেরকেও কেমন খারাপ করে দিতে পারে। সেটাও জিহাদের ময়দানগুলোতে আপনারা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কত যোগ্যতাসম্পন্ন, মেধাবী ও চৌকশ ব্যক্তিত্ব, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিও এই নফসের হামলার শিকার হলো, তখন এই সকল অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা আল্লাহর দ্বীনের কোন ফায়েদা দিতে পারবে না। কারণ আল্লাহ তাআলার নিকট এগুলো অত্যন্ত অপছন্দ, চাই যে মুজাহিদ হোক অথবা হারাম শরীফে ইবাদতরত আবেদ হোক। যদি সে নিজেকে বড় মনে করতে থাকে, তাহলে الله الصمد আল্লাহ তো অমুখাপেক্ষী। আল্লাহর জরুরত নেই কারো ইবাদতের! কারো জিহাদের!

আল্লাহ তাআলার উজব পছন্দ নয়, বড়ত্ব প্রদর্শন পছন্দ নয়। চাই সেটা অন্তরের মাঝে থাক না কেন! কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে বান্দা বানিয়েছেন। যখন তার বান্দা বান্দার স্তর থেকে উপরে উঠতে থাকে, তাহলে এটা কিভাবে হতে পারে যে তাকে পছন্দ করবেন? তার ইবাদত কবুল করবেন?

তিনি ঘোষণা করেছেন الكبرياء ردائى, এই উপরে উঠা, এই বড়ত্ব আমার চাঁদর, আর কে রয়েছে যে তাঁর থেকে তা ছিনিয়ে নিতে পারে? কেউই ছিনিয়ে নিতে পারবে না। অপরদিকে এর বিপরীত আপনারা দেখবেন, যে আল্লাহ তাআলা সাদাসিধা, নতুন নতুন ও সাধারণ মুজাহিদদের দ্বারা দ্বীনের এতো বড় কাজ নিয়ে নেন যে, সকল লোক তাঁর উপর ঈর্ষা করতে থাকে।

মেরে দোস্ত! এই উজব-ই জিহাদের কাতারসমূহে বিচ্ছিন্নতা ও বিক্ষিপ্ততার প্রথম বীজ বপন করে। একজন মুজাহিদ, যে আল্লাহ তাআলার জন্য ঘরবাড়ী ছেড়ে আসে, সব কিছু কুরবান করে আসে, পরিশেষে কি কারণ থাকতে পারে যে, একাকিই নিজের রায়ের উপর অটল থেকে যায়? যখন তার মশওয়ারাকে কবুল করা হয় না, তখন সে জিহাদের কাতার ছেড়েই চলে যায়, অথচ সে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁর জানের সওদা করেছিল।

এটা হচ্ছে নফসের হামলা, যা উজবের সুরতে তাঁদের উপর করা হয়েছিল। তাঁর রায়কে নফস এতো সুসজ্জিত করে দেখিয়েছে যে, এই সকল লোকদের মধ্য থেকে সর্বাধিক উত্তম ও রায় প্রদানের যোগ্য আপনিই! হক জারি হলে তো আপনার জবানেই জারি হয়। আল্লাহ আমাদের স্বীয় পানাহে রাখুন। নফসের এই ধোঁকা থেকে আল্লাহ আমাদের স্বীয় পানাহে রাখুন। কিন্তু জিহাদের ময়দানেও এবং হারাম শরীফে ইবাদতকারী আবেদের অন্তরেও এই ধরণের খেয়ালসমূহ ঢালতে পারে, তাঁদের উপর আক্রমণ চালাতে সক্ষম। এই বিষয়গুলো আপনারা অবশ্যই দেখেছেন। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুজাহিদ এর অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করুন।

এই দৃষ্টিভঙ্গি এক দিনেই মজবুত হয় না। এই বিল্ডিং এর নির্মাণে নফস একটি দীর্ঘ ও লম্বা সময়ের মেহনত করে। আর যে গাফলতের শিকার হয়, সে তা অনুধাবন করতে পারে না।

الكيس من دان نفسه

যদি সে স্বীয় নফসের হিসাব গ্রহণ করতে থাকতো, অন্তরে উদিত হওয়া খেয়ালসমূহের মুহাসাবা করতে থাকতো, তাহলে নফস এ পর্যন্ত সুযোগ পেতো না। সুতরাং এই দৃষ্টিভঙ্গি একদিনেই এতোটা শক্তিশালী হয় না, বরং এর জন্য যথেষ্ট সময় লাগে, নফস এর পিছনে যথেষ্ট মেহনত করেছে।

সুতরাং আমার প্রিয়তম সাথীগণ! এই ধারণা ও নফসের ধোঁকা থেকে বাঁচার অনেক প্রয়োজন রয়েছে। মুজাহিদদের এই ধারণা যে সে পুরাতন মুজাহিদ, তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি, অথবা সে অনেক কাজ করেছে অথবা তাঁর চাইতে বেশি কারো ইলম নেই, এটা নফসের ধোঁকা। তার বাতিল হওয়ার জন্য আর কারো দলিলের প্রয়োজন নেই, এতোটুকুই যথেষ্ট যে এটাকে উজব বলা হয়, এবং উজব আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত অপছন্দ। অতঃপর যখন এই বাক্য মুখে প্রকাশ পায়, তখন তো এটা তাকাব্বুর হয়ে যায়, উজব আর বাকি থাকে না, এটাকে তাকাব্বুর বলে।

আমার প্রিয়তম ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুন! আমাদের রব আমাদের সর্বদা এই অবস্থায় দেখুক যে, আমরা তার বান্দা হয়ে আছি। কোন অবস্থায় যেন انا خير منه  “আমি তাঁর চাইতে উত্তম” এর মত ইবলিসি বাক্য মুখ থেকে বের না হয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের স্বীয় নিরাপত্তায় রাখুন।

*এই নফস-ই ইবলিসকে এই ধারণায় লিপ্ত করেছিল যে,  من نار و خلقته من طين

انا خير مِّنْهُ خَلقتَنِي দেখুন সে তাঁর খালেক/সৃষ্টিকর্তা বলছে,  সে স্বীয় নফসের ধোঁকায় এমনভাবে পড়েছে যে, সে স্বীয় খালেককে বলছে, যে আমি তাঁর চাইতে শ্রেষ্ঠ। কারণ আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। এভাবে গাফলতের শিকার হয়ে গেল।

সুতরাং কোন অবস্থায় এই বাস্তবতা ভুলে যাবেন না, যে আমাদের পূর্বে কত পুরাতন মুজাহিদ অতিবাহিত হয়ে গিয়েছেন। জিহাদের ময়দানে তাঁদের বীরত্ব ও সাহসিকতা, নেতৃত্ব ও মেধার উপাখ্যানসমূহ ব্যাপক ছিল। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে কত জন ছিল, যে কুফরি শক্তির সামনে দাড়িয়ে থাকতে পেরেছে? আল্লাহ তাঁর অসন্তুষ্টি থেকে আমাদের হেফাজত করুন এবং আমাদের পরিসমাপ্তি ঈমানের উপর দান করুন এবং জিহাদের কাতারসমূহে আমাদের শাহাদাত দান করুন এবং কিয়ামতের দিন এই-

السابقون السابقون أولئك المقربون.

এর মাঝে আল্লাহ তাআলা আমাদের হাশর করুন ।

কিন্তু আপনারা কি দেখছেন না, এদের মাঝে কত লোক রয়েছে, যারা আজ শরীয়ত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শরীয়তের দুশমনদের কাতারে বিদ্যমান রয়েছে? কিন্তু নফসের মাইর শয়তানের মাইরের চেয়ে অধিক খতরনাক যে, এর অনুধাবনও হয় না।

আপনারা এই কথা ভুলে যাবেন না যে আল্লাহ তাআলা কারো দ্বারা জিহাদের কাজ নিচ্ছেন, তো ওই মুহূর্তেও তাওয়াজু জরুরী। কেননা তাঁর নফস তাকে এটা পছন্দনীয় করাতে চাইবে যে, এই যে কাজ হচ্ছে এটা তো আপনার কারণেই হচ্ছে। আপনার মশওয়ারা, আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার মেহনতের কারণেই হচ্ছে। ব্যস যখন অন্তরে এই খেয়াল সৃষ্টি হতে থাকে, তাহলে বুঝে নিন যে, নফসের তীরের বিষ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আল্লাহ তাআলার আশ্রয় কামনা করুন।

সুতরাং এটাকে খতম করার জন্য, উজব থেকে বাঁচার জন্য যে পদ্ধতি সাহাবায়ে কেরাম রা. অবলম্বন করেছেন, সেটা কার্যকর পদ্ধতি। সালফে সালিহিন থেকে এই পদ্ধতি বর্ণিত। এই নফসের মুহাসাবা, তার শক্তি তাকে স্মরণ করিয়ে দিতে থাকা, তাঁকে হুমকি ধমকি দিতে থাকা, এবং নিজের অবস্থা সম্পর্কে অবগত থাকা। নিজের উপর আসা সকল নেয়ামতকে আল্লাহ তাআলার দিকে সম্পৃক্ত করা।

উজবের একটি কারণ, তার আশেপাশের পরিবেশও হয়ে থাকে যে, পরিবেশই এমন, এই দিকে ভ্রুক্ষেপই নেই, এবং প্রত্যেকেই উজব এবং বড়ত্ব প্রদর্শনে লিপ্ত রয়েছে, গর্ববোধ করছে। একজন অপরজনের উপর প্রতিযোগিতা করছে। দুনিয়াবি মুআমালের মধ্যে বড়ত্বের মধ্যে উত্তম হলো এর থেকে বাঁচার ব্যাপারে গুরুত্ব প্রদান করা। কখনো এমন হয় যে, মানুষ এক খাস পরিবেশ এবং খাস হালকায় থেকে থেকে বড় হয়ে যায় এবং ওই হালকা থেকে বের হয়ে সে আর দেখে না, এবং সে নফসের মুহাসাবাও করে না যে, তুই কি? তোর ক্ষমতাই বা কি? দুনিয়াতে তোর চাইতে কত বড় বড় লোক বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু কোন এক খাস মহলের মাঝে থাকার ফলে সে এক খোলসের মাঝে বন্দি হয়ে পড়ে।

মানুষের জন্য উচিত যে, সে তার চাইতে উত্তম লোকদের সোহবত গ্রহণ করবে। তাঁর চাইতে অধিক ইলমের অধিকারী লোকদের সাথে বসবে। নিজের চাইতে অধিক ভালো লোকদের সাথে উঠাবসা করবে, যাতে নফসের এই ক্ষমতার বিষয়ে অনুভূতি আসে যে, তোর চাইতে অধিক ভালো লোক এই দুনিয়াতে বিদ্যমান আছে। তোর চাইতে ধিক ইলমের অধিকারী, এবং অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোক এই নিয়াতে বিদ্যমান আছে।

এমনিভাবে তাঁর ইখলাসের একটি পদ্ধতি এটাও হতে পারে যে, সে তাঁর কোন বন্ধুর সাথে চুক্তি করে রাখবে, যদি আমার মুখ দিয়ে কখনো কোন বড়ত্ব প্রকাশ পেয়ে যায়, তাহলে আপনি আমাকে সতর্ক করে দিবেন, যাতে আমি আমার ইসলাহ্ করে নিতে পারি। যেহেতু এমন পরিবেশে আছি, যেখানে এগুলো অনুধাবন করা যায় না। এগুলো ব্যাপক হয়ে যায়। কারো সাথে এমন চুক্তি করে নিন এবং তাঁকে ইসলাহের মাধ্যম বানিয়ে নিন।

এই ধরণের মজলিস এবং সোহবত থেকে বেঁচে থাকুন, যেখানে আপনার মুখের সামনে আপনার প্রশংসা করা হয়। যদি আপনার প্রশংসা করা হয়, তাহলে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. থেকে বর্ণিত- যখন কেউ তাঁর সামনে তাঁর প্রশংসা করতো অথবা তাঁর কাছে তাঁর প্রশংসা পৌঁছতো যে তাঁর পশ্চাতে কেউ তাঁর প্রশংসা করেছে, তাহলে তিনি এই দুআ করতেন-

اللهم أنت أعلم مني بنفسي وأنا أعلم بنفسي منهم.

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার চাইতে অধিক জানেন এবং আমি আমাকে ওই লোকদের চাইতে বেশি জানি, যারা আমার প্রশংসা করছে।”

اللهم أجعلني خيراً مما يظنون.

“হে আল্লাহ! লোকেরা আমার ব্যাপারে যেমন ধারণা করে, আমাকে তাঁর চাইতে অধিক ভালো বানিয়ে দিন।”

وأغفر لي ما لا يعلمون.

“আমার যে গুণাহসমুহ সম্পর্কে এরা অবগত নয়, সেগুলো ক্ষমা করে দেন।”

ولا تؤاخذني بما يقولون.

“তারা আমার যে প্রশংসা করছে, আপনি আমাকে সে ব্যাপারে পাকড়াও করিয়েন না!” এই দুআ একটি উত্তম দুআ ।

এমনিভাবে একটি দুআ আরও বর্ণিত আছে যে-

اللهم اني اعوذ بك من العجب وسوء الكبر

সকাল সন্ধ্যা যদি এই দুআ করা হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার কাছে আশা, তাঁর রহমতের কাছে আশা যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের এই রোগ থেকে বাঁচিয়ে নিবেন। নফসের এই হামলা থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মুক্ত রাখবেন। আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আমাদেরকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ তাআলা সকল সাথীকে এর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

اللهم اعط نفسه تقواها

وزكها أنت خير من زكاها

انت وليها ومولاها

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

 

 

 

 

 

 

 

দরসে তাযকিয়া

গীবত এবং চোগলখুরি

 

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيدالمرسلين ، وعلى اله  وصحبه اجمعين، اما بعد أعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا

                                                                    :وقال سبحانه وتعالي

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا، يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا

 

সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে ৷

আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাই-বোনেরা!

এই দরস সমূহ সেই প্রচেষ্টারই ধারাবাহিক অংশ, যার জন্য আমরা স্বীয় জানের সওদা করেছি। যে উদ্দেশ্যে আপনারা হিজরত ও জিহাদের ময়দানে কদম রেখেছেন। যার জন্য আপনারা সারা দুনিয়ার বাতিল পরাশক্তির সাথে শত্রুতা পোষণ করেন।

এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, দুনিয়া থেকে কুফরি নেযাম ও অনৈসলামিক জীবন পদ্ধতি খতম করে মহান আল্লাহর নাযিলকৃত নেযাম এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনিত জীবন পদ্ধতি দুনিয়াতে প্রসার ও প্রচলন করা।

যে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর ঝাণ্ডা আমরা উত্তোলন করেছি এবং এর জন্য সকল কষ্ট-ক্লেশ আমরা বরদাশত্ করেছি, তার শেষ ও প্রান্ত সীমা কি?

وبكون الدين كله لله

অর্থাৎ পরিপূর্ণ দ্বীন, সমগ্র জীবন পদ্ধতি যেন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়, আল্লাহর শরিয়ত অনুযায়ী হয়ে যায়।

ইহার জন্য যেখানে একদিকে নিজের প্রকাশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, অপরদিকে নিজের অপ্রকাশ্য শত্রু অর্থাৎ নফসের মোকাবিলা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুজাহিদের জিহাদ বিশুদ্ধকারী ও বিনষ্টকারী এই অপ্রকাশ্য শত্রু মারাত্মক ক্ষতিকারক। সুতরাং যেভাবে আমরা নিজের প্রকাশ্য শত্রুর সামরিক ষড়যন্ত্র ও তার অপকৌশল ও ধোকাবাজি থেকে বেঁচে থাকি, তাদের পাতানো গোয়েন্দাজাল সম্পর্কে চৌকান্না থাকি, এমনিভাবে আমাদের অপ্রকাশ্য দুশমনের ধোকাবাজি থেকেও সর্বদা সচেতন থাকা অতিব জরুরি।

গাফলতির সময়ই আক্রমণ করা সর্বোত্তম সময়। যে নিজের নফসের অনিষ্টতা থেকে, নিজের নফসের চালাকি ও অপকৌশল থেকে গাফেল হয়ে গেলো, সে তার ধোকাবাজি ও আক্রমণের শিকার হতে পারে।

সুতরাং গত মজলিসে আমরা নফসের ওই আক্রমণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি, যা অন্তরের উপর হয়ে থাকে এবং অন্তরের মধ্যেই জায়গা করে নেয়। অন্তরে জায়গা করে নেওয়ার পর এর প্রতিক্রিয়া মানুষের বাহ্যিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে, যার প্রথম মাধ্যম হলো জিহ্বা।

জবান দ্বারা মানুষের ভিতরে যা থাকে, তাই প্রকাশ পায়। সুতরাং আজ আমরা জবানের হেফাজত ও এর প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করবো। আল্লাহর নিকট দুয়াপ্রার্থী যে তিনি আমাদের জবানকে তার সন্তুষ্টির অনুগামী বানিয়ে দিন। আল্লাহ তায়ালা এই জবান দ্বারা কল্যাণ অর্জনকারী বানিয়ে দিন এবং তার অসন্তুষ্টিমূলক কথাবার্তা থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا.

“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদৃঢ় কথা বলো।” [সুরা আহযাব: ৭০]

অর্থাৎ নাজায়েয, মিথ্যা এবং এমন কথাবার্তা, যা থেকে আল্লাহ ও তাঁর নিষেধ করেছেন তা নিজের জবান দ্বারা বের করো না!

আরেকটু সামনে বেড়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ.

“তিনি তোমাদের আমল-আচরন সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন।” [সুরা আহযাব: ৭১]

ইমাম ইবনে কাসির রহ.-এর তাফসীরে বলেন-

ووعدهم أنهم إذا فعلوا ذلك ، أثابهم عليه بأن يصلح لهم أعمالهم

“আল্লাহ তায়ালা এই জবানের হেফাজতের মাধ্যমে অর্থাৎ তুমি জবান দ্বারা জায়েয এবং সত্য কথা বলবে তো আল্লাহ তায়ালা প্রতিদানস্বরূপ তোমার গুনাহ মাফ করে দিবেন।”

 

লক্ষ্য করুন, জবানের হেফাজত করার প্রভাব কী পরিমান দূরত্বে গিয়ে পড়ছে যে আল্লাহ তায়ালা এর বদলায় বলেন, يصلح لكم اعمالكم “আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আমল সংশোধন মাফ করে দিবেন।”

সুতরাং এই বিষয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ বাক্য বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন-

من كان يؤمن بالله واليوم الاخر

যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে এক রব মানে, এবং এমনভাবে মেনে নেয় যে, আগামীকাল তার সামনে জবাবদিহিতার জন্য দাঁড়াতে হবে।

 

একটু চিন্তা করুন যে ব্যক্তির বাদশাহর রাজকীয় আদালতে গিয়ে দাঁড়ানোর ইয়াকিন হয়ে যায়। তার উচিৎ-

فليقل خيرا أو ليصمت

যার এই বিশ্বাস আছে যে, সে একদিন নিজের রবের সামনে দাঁড়াবে এবং একটি একটি করে আমলগুলো দেখানো হবে। তার উচিত সে জবান দ্বারা উত্তম বাক্য বলবে, কল্যাণের কথা বের করবে অথবা চুপ থাকবে।

সুতরাং যদি আমাদের জবানের হেফাজত করতেই হয়। আমাদের এই কথার গুরুত্ব দিতেই হয় যে, আমাদের জবান দ্বারা কল্যাণ বের হবে অথবা আমরা চুপ থাকবো, তবে মানুষ অগনিত গুণাহ থেকে বাঁচতে পারে, অনেক ফেতনা ফাসাদ থেকে এবং খারাবি ও আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথাবার্তা থেকে বাঁচতে পারে।

জবানের বিপদ

 

যার সম্বন্ধে সালাফগণ অনেক কিছু লিখেছেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে আমাকে দুটি বস্তুর জামানত দিতে পারবে, আমি তাঁর জান্নাতের দায়িত্ব দিবো।

ما بين الفخذين وما بين الشفتين

যা দুই রানের মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে অর্থাৎ লজ্জা স্থানের হেফাজত এবং জবানের হেফাজত।

এই জবান দ্বারা মানুষ রবকে কতই না অসন্তুষ্ট করতে পারে এবং কী পরিমাণ গুণাহ-ই না অর্জন করতে পারে! এগুলোর মধ্যে একটি বড় গুণাহ হলো চোগলখুরি ও গীবত।

গীবতের মন্দচর্যের জন্য কুরআনের আয়াতের এই অংশই যথেষ্ট-

وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا

“তোমরা কেউ অপরের গীবত করবে না!” [সুরা হুজরাত: ১২]

 

أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ

“তোমাদের কেউ কি এটা পছন্দ করবে যে, সে নিজ ভাইয়ের গোশত খাবে?” [সুরা হুজরাত : ১২]

লক্ষ করুন কুরআনে কারীম কীভাবে এর খারাবি বয়ান করছে এবং নবুওয়াতী জবান দ্বারা এর ভয়ানক পরিণতির ঘোষনা করছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে, মেরাজে আমি এমন লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করি-

يخمشون وجوههم بأظافرهم.

“যারা নিজের নখ দ্বারা নিজের চেহারা ক্ষত বিক্ষত করছে।”

জিবরাঈল আ. বলেন-

هؤلاء الذين يغتاب الناس ويقعون في أعراضهم.

“এরা হলো যারা অপরের গীবত করতো এবং তাদের ইজ্জত ধূলিসাৎ করতো”।

এমনিভাবে চোগলখুরি। এটা সমাজে বা জীবনে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে। যেমন তেমনভাবে চোগলখুরিও সমাজের জন্য বা জীবনের জন্য প্রভাব বিস্তারকারী কাজ করে। যে সবচেয়ে একতাবদ্ধ সমাজকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

সুতরাং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খারাবি বর্ণনা করেছেন-

تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بِوَجْهِ وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهِ

অর্থাৎ “এখানকার কথা ওখানে লাগানো, ওখানের কথা এখানে লাগানো, আল্লাহর কাছে কিয়ামতের দিন সবচে' গজবপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে এরা।” [সহীহ বুখারী- ৫৭১১]

সুতরাং এখানকার কথা ওখানে লাগানো, ওখানের কথা এখানে লাগানো, এগুলোর দ্বারা ফাসাদ ছাড়া আর কিছুই হয় না। সমাজ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অন্তরসমূহের মাঝে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সবচে' অপছন্দনীয় লোকদের মধ্যে থেকে হবে-

المشاؤون بالنميمة المفرقون بين الأحبة.

“চোগলখোর এবং বন্ধুদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী।”

ওই আট শ্রেণীর লোক, যারা কিয়ামতের দিন সবচে' গজবপ্রাপ্ত হবে। যারা আল্লাহ তাআলার কাছে সবচে' অপছন্দনীয় হবে, তাদের মধ্যে এদেরকেও বর্ণনা করা হয়েছে।

المشاؤون بالنميمة المفرقون بين الأحبة.

“চোগলখোর এবং বন্ধুদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টিকারী।”

এখন প্রশ্ন হল এই যে, চোগলখুরি কত বড় গুণাহ তা মুসলমানরা জানে। মুসলমানরা এটাও জানে- যে কোন সম্পর্ক ধ্বংসের জন্য এতোটুকুই যথেষ্ট যে, তা জানা সত্ত্বেও সমাজের মাঝে পুরাটাই ভালো হোক এটা চাই, কিন্তু এই রোগ যদি বিদ্যমান থাকে, তাহলে সম্পর্ক টিকতে পারে না।

সেই সম্পর্ক ভেঙ্গে যাবে, মুহাব্বত খতম হয়ে যাবে। ওই অন্তরসমূহের মাঝে ঘৃণা থেকে যাবে। তারপরও আমাদের সমাজসমূহ এই রোগে আক্রান্ত কেন? আমাদের মাঝে কেন এই বিষয়টি বিদ্যমান আছে? কেন আমরা বের করে ফেলতে পারছি না?

একজন মুসলমান এটা থেকে তাওবাও করে নেয়, কিন্তু কিছু সময় পর পুনরায় এতে লিপ্ত হয়ে পড়ে। যদি কখনো সরাসরি লিপ্ত নাও হয়, কিন্তু অপব্যাখ্যা করে এর ফাঁদে ফেঁসে যায় এবং নফস তাকে পুনরায় এই এর মাঝে লিপ্ত করে ফেলে।

তাবীল বা অপব্যাখ্যা করে যে, আমরা তো এই কথা তার মুখের -সামনেই বলেছি, সুতরাং সমস্যা হওয়ার কথা না!

যাই হোক আপনি যদি তার সামনেই বলে থাকেন, তবুও এটা গীবত-ই হবে, চোগলখুরি-ই হবে। সুতরাং এই অপব্যাখ্যা করে এটাকে নিজের জন্য জায়েজ করে নেওয়া ঠিক নয়।

এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, এটাকে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়? কিভাবে আমরা আমাদের ইসলাহ করবো, যে রোগটি মহামারীর রূপ ধারণ করেছে।

আমরা যদি মহামারীকে প্রতিরোধ করতে চাই, তাহলে প্রথমে আমাদেরকে সমাজ সংশোধনের সেই পদ্ধতির দিকে দেখতে হবে, যার তরবিয়ত মানবতার ইমাম আকায়ে মাদানি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং করেছেন।

আসুন! রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র জীবনের উপর গভীরভাবে চিন্তা ফিকির করি।

আরবের জাহেলি সমাজকে রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিভাবে একটি উপমা প্রদানযোগ্য সমাজ বানালেন! রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন পদ্ধতি ও নবুওয়াতের সেই যুগ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ফিকির করলে একটি বিষয় বুঝে আসে, চোগলখুরি ও গীবত থেকে বাঁচানোর জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু একাকী উৎসাহ প্রদান করেই ক্ষান্ত হননি, অর্থাৎ শুধুমাত্র সেই হাদিসগুলো বর্ণনা করেই ক্ষান্ত হননি, যেগুলোতে চোগলখুরি ও গীবত করার ব্যাপারে কঠিন ধমকিসমূহ শোনানো হয়েছে বরং এই মহামারী প্রতিরোধ করার জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো সমাজকে আন্দোলিত করেছেন। অর্থাৎ মুসলমানদের শুধু গীবত পরিত্যাগের উৎসাহ-ই দেননি, বরং অন্য মুসলমানকে গীবতকারীকে প্রতিহত করা, তার মজলিস থেকে উঠে যাওয়া, এবং যার গীবত করা  হচ্ছে, তার পক্ষ থেকে প্রতিরোধকরণের মাধ্যমে এই মহামারীর গোঁড়া উপড়ে দিয়েছেন।

কেন? কারণ হল গীবত ও চোগলখুরি হচ্ছে একটি ছোঁয়াচে রোগ, এই গুনাহের প্রভাব শুধু কর্তা ব্যক্তির সাথেই খাস নয়, বরং উক্ত মজলিস এবং পুরো সমাজে তা ছড়িয়ে পড়ে। সুতরাং এই মহামারীকে প্রতিরোধ করার জন্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরো সমাজকে সামগ্রিকভাবে উৎসাহ প্রদান করেছেন। এবং এটাকে সহ্য করা এবং চুপ থাকার ব্যাপারে অত্যন্ত অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজে সংক্রামক এই ব্যাধিকে অত্যন্ত অপছন্দ করেছেন যে, এক মুসলমান এই ব্যাধি হতে দেখেও চুপ থেকে তামাশা করবে, বান্দার অসন্তুষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহ তাআলাকে অসন্তুষ্ট করে বসবে!

সুতরাং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আনুগত্যকারীদের মন্দ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডকে প্রতিরোধ করার জন্য সাহসী ও বাহাদুর বানিয়েছেন। তাঁদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন আঙ্গিকে তাঁদেরকে উৎসাহিত করেছেন।

সমাজকে কিভাবে আন্দোলিত করা হয়েছে? চোগলখুরি ও গীবতকে প্রতিহত করার জন্য সমাজকে কিভাবে কার্যকর করা হয়েছে? তার মধ্যে একটি হলো নিজ মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিরক্ষা করবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চোগলখুরি ও গীবত প্রতিরোধের জন্য এমনটি করেছেন। সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

من رد عن عرض اخيه كان حقا علي الله ان يرد عن عرضه يوم القيامة.

“যে কেউ তাঁর মুসলমান ভাইয়ের ইজ্জতের প্রতিরক্ষা করলো, আল্লাহ তাআলার জন্য আবশ্যক যে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর ইজ্জতের হেফাজত করবেন।”

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহ তাআলা এই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করবেন।

লক্ষ্য করুন! চোগলখুরি ও গীবতকে প্রতিরোধ করার জন্য সমাজকে আন্দোলিত করা হচ্ছে!

যখন একজন মুসলমান অপর মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর দোষ সহ্য করবে না, তাঁর প্রতিরক্ষাকারী হয়ে যাবে। অতঃপর কার সাহস হবে যে, সে কারো দোষ বর্ণনা করবে। অতঃপর যখন এটা সমাজের একটি ব্যাপক পরিবেশ হয়ে যাবে, তখন যদি কারো গীবত করতে অন্তরে চায়ও, কিন্ত সে বুঝবে যে, পরিবেশ গীবতের উপযুক্ত নয়। সুতরাং সে এই মন্দ কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে।

অন্য বর্ণনায় রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজকে এই গুণাহের বিরুদ্ধে আন্দোলিত করার জন্য পরিষ্কার ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন-

إِذَا وُقِعَ فِي رَجُلٍ وَأَنْتَ فِي مَلاً.

“যখন কোন মজলিসে কোন মুসলমানের গীবত করা হয়, আর তুমি এই মজলিসে উপস্থিত আছ,'

فَكُنْ لِلرَّجُلِ نَاصِرًا.

“তাহলে যার দোষ বর্ণনা করা হচ্ছে, তাঁর সাহায্যকারী হয়ে যাও!” অর্থাৎ তাঁর বৈধ প্রতিরক্ষা কর!

وَلِلْقَوْمِ زَاجِرًا.

“এবং এই মজলিসের লোকদেরকে এই মন্দ কাজের ব্যাপারে সতর্ক কর।” যে তোমরা উপস্থিত থাকা অবস্থায় এই ব্যক্তি কোন মুসলমানের দোষ বর্ণনা করছে, আর তোমরা চুপ করে আছ! সমাজকে আন্দোলিত করার এবং কোন জামাআতের সদস্যদের আন্দোলিত করার এটা একটি উত্তম মাধ্যম।

দেখুন যদি একাকী নসিহত করা হয়, তাহলে মানুষ কমজোর আয়াত শোনা সত্ত্বেও, হাদিসসমূহ শোনা সত্ত্বেও, ধমকিসমূহ শোনা সত্ত্বেও কিন্তু গাফলতি তার উপর ছেয়ে যায়।

মোটকথা মানুষের উপর গাফলতি ছেয়ে যায়, এ কারণেই তো তার দ্বারা গুনাহ হয়ে যায়। কিন্তু যখন আশেপাশের পরিবেশ সতর্ককারী হিসেবে বিদ্যমান থাকে, অর্থাৎ যদি কখনো তার উপর গাফলতি চেপে বসে, তখন আশাপাশের পরিবেশ তা দূর করে দেয়, তাহলে যে কোন পরিস্থিতেই এই মুসলমান এই গুণাহ থেকে বিরত হয়ে যাবে। এই গীবত করা থেকে বিরত হয়ে যাবে।

এই জন্য শরিয়ত পরিবেশকে সংশোধনের জন্য অনেক জোর দেয়। যদি প্রতিরক্ষা করতে না পারে, অর্থাৎ না আপনারা বিরোধিতা করতে পারেন, আর না মন্দ কর্মকাণ্ডকারী, চোগলখোর অথবা গীবতকারীকে আপনারা প্রতিহত করতে না পারেন, তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিয়া ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

أَوْ قُمْ عَنْهُمْ.

“এই মজলিস থেকে উঠে যাও!” এর ফলেও গীবতকারীর উৎসাহ ভেঙ্গে যাবে।

আল্লামা ইবনে হাজার রহ. ফাতহুল বারীতে ইমাম গাজ্জালি রহ. এর হাওয়ালা দিয়ে চোগলখুরির প্রতিরোধ করার ব্যাপারে খুবই চমৎকার একটি কথা নকল করেছেন- আল্লাহ তাআলা এর মাধ্যমে আমাদের উপকারী বানান।

যখন কারো সামনে কারো চোগলখুরি করা হবে, তার উচিত সে যেন এই কথায় বিশ্বাস না করে। যে চোগলখুরি করছে, তার কথা বিশ্বাস না করা হোক। এই ব্যাপারে কোন ধারণাই না করুক, জেহেনেও না আনুক, অন্যথায় সে হতভম্ব হয়ে যাবে যে, সত্য কোনটা মিথ্যা কোনটা?

তবে তা যদি কোন ইজতিমায়ি বিষয় হয়, যার ব্যাপারে শরীয়ত অনুমতি প্রদান করে। তবুও এই চোগলখোরকে প্রতিহত করা হবে। তার সম্মুখে এই চোগলখুরির খারাবি বর্ণনা করবেন, আর যদি এই ব্যক্তি এই স্বভাব থেকে ফিরে না আসে, তাহলে তাকে মন্দ লোক ধারণা করবেন ।

আর হ্যাঁ এরপর এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, এমন যেন না হয় যে, আপনিও বর্ণনা করা শুরু করলেন, তাহলে তো আপনিও চোগলখোর হয়ে যাবেন।

إذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم.

এমন যেন না হয় যে, আপনিও আপনার মুখে সেই কথাগুলো বর্ণনাকারী না হয়ে যান! বরং যদি কোন মুসলমানের ব্যাপারে কোন কথা শুনেন-

وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَا أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَدًا.

যখন কোন মুসলমানের ব্যাপারে আপনি কোন কথা শুনেন, তাহলে বলুন ‘মায়াজাল্লাহ’ আমরা এই কথা বলি না।

ভালো কথা বলা উচিত এবং ধারণা করা উচিত নয়। এই যে দৃষ্টিভঙ্গি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজে সৃষ্টি করেছেন, তা গীবত এবং চোগলখুরির জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে গেলো, দেয়াল হয়ে দাঁড়াল। এর ফায়েদা এটা হবে যে, আমরাও যদি এর মেহনত করি, যে, যখন সমাজই এর বিরুদ্ধে চলে যাবে, তখন আর কোনো ব্যক্তির গীবত ও চোগলখুরির সুযোগ হবে না। আপনারা কি লক্ষ্য করেন নি যে, যে কাজগুলোর ব্যাপারে সমাজে মন্দ ধারণা প্রচলিত আছে, সেগুলো কখনো সমাজে ব্যাপক হয় না। এখানে একটা কথা জেহেনে রাখা জরুরি, আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকারের সর্বনিম্ন স্তর এটা বর্ণনা করা হয় যে, যদি কোন মন্দ কাজকে হাত দ্বারা প্রতিহত করা না যায়, তাহলে মুখ দ্বারা প্রতিহত করা হবে, আর যদি মুখে প্রতিহত করার সাহস না হয়, তাহলে অন্তরে ঘৃণা করা হবে, এটা ঈমানের সর্বনিম্ন স্তর বয়ান করা হয়।যদি কোন সমাজের মাঝে এই সর্বনিম্ন স্তরই মাপকাঠি হয়ে যায় যে তারা হাত দ্বারা না কোন মন্দ কাজ প্রতিহত করে, আর না মুখ দ্বারা কোন মন্দ কাজ প্রতিহত করে, এবং বলে থাকে যে, এটাও তো ঈমানের স্তর এবং অন্তরে খারাপ জানাটার উপরই ক্ষান্ত করে নেয়, তাহলে এর উদ্দেশ্য হল এই যে, এই সমাজ অথবা জামাআত ঈমানের এই স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে।

কেননা তারা নিজেরাই নিজেদের ঈমানকে এই স্তরে এনে নামিয়েছে। ফলে তারা না কোন মন্দ কাজকে হাত দ্বারা প্রতিহত করে, আর না মুখ দ্বারা প্রতিহত করে। তাহলে তো বান্দার ভয় আল্লাহর ভয়ের উপর বিজয়ী হয়ে গিয়েছে। তো নিজেরাই ঈমানের সর্বনিম্ন স্তরে এসে দাঁড়িয়েছে। হাত বা মুখ দ্বারা যখন এই মন্দকাজগুলোকে প্রতিরোধ না করবে, তখন তো এদের পথ থেকে প্রতিবন্ধকতা শেষ হয়ে যাবে। এবং আপনারা জানেন মন্দকাজগুলোকে প্রতিহত করার ক্ষেত্রে সামাজিক প্রতিরোধ কত বড় ভূমিকা রাখে, এর আন্দাজ শরীয়তে এর গুরুত্ব অনুধাবন করার দ্বারা করতে পারেন। আপনারা এর গুরুত্ব কিতালের ফাজায়েল, এর হুকুম আহকাম, এবং আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার এর গুরুত্ব দ্বারা অনুধাবন করতে পারবেন।

সুতরাং যখন কোন সমাজে মন্দ কাজ ব্যাপক হয়ে যায়, এবং কোন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মুসলমান হাত দ্বারা তা প্রতিহত করার সাহসকারীও অবশিষ্ট না থাকে, তাহলে এমন পরিবেশে কোন নেককার থেকে নেককার মুসলমানও কত দিন তা মন্দ বলে ঘৃণা করতে পারে? অর্থাৎ অন্তর থেকে এভাবে মন্দ জানা এটা শরীয়তসিদ্ধ ঠিক আছে! অন্তর থেকে মন্দ জানার দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, আপনি মন্দও জানবেন, আবার একই মজলিসে তার সাথে উঠাবসাও করবেন, তার বাড়িতে দাওয়াতও খায়, তাকে নিজের দাওয়াতও খাওয়ায়। অন্তর থেকে মন্দ জানার উদ্দেশ্য হলো, তোমরা তার সাথে উঠা-বসা ছেড়ে দাও, তার সাথে খানাপিনা ছেড়ে দাও ।

মোটকথা স্বীয় মুসলমান ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর প্রতিরক্ষা করা গীবত ও চোগলখুরির পথে প্রতিবন্ধক হতে পারবে। আর যদি আমরা নিজেদের জামাআতের মাঝে, নিজেদের সমাজে এই দৃষ্টিভঙ্গির কার্যকর রূপ দেই, তাহলে ইনশাআল্লাহ কেউ চাইলেও এই গুণাহে পারবে না। লিপ্ত হতে আমাদের জামাআতবদ্ধভাবে, এবং সমাজবদ্ধভাবে এই গুনাহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। স্বীয় মুসলমান ভাইয়ের দোষ গোপন রেখে তাকে প্রতিরক্ষা করতে হবে। গীবতকারী মুখকে প্রতিহত করতে হবে। আর যদি প্রতিহত করতে না পারি, তাহলে অন্তত তার সাথে উঠাবসা বন্ধ করতে পারি, তার মজলিসে বসা খতম করতে হবে। আল্লাহ তাআলার কাছে দুয়া করি যেন, আল্লাহ আমাদের মুখকে এই সকল কাজ থেকে হেফাজত রাখেন, এবং এই মুখকে তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী চলার তাওফিক করুন। আমিন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হে উম্মাহ! আল্লাহর সাহায্যের জন্য প্রস্তুত হোন

 

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين، وعلى آله وصحبه أجمعين ، اما بعد أعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم 

وقال سبحانه وتعالي : أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَاسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَه مَتى نصر الله لا إن نصر الله قَرِيبٌ

 

সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য, সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক তাঁর উপর যার পরে আর কোন নবী নেই। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَاسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُوْلَ الرَّسُوْلُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَه مَتى نصر الله لا إن نصر الله قَرِيبٌ

“তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করোনি যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে শিহরিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী। [সুরা বাকারা: ২১৪]

আমার মুজাহিদ সাথীরা!

আল্লাহর রাস্তায় নিজেদের জীবন বিসর্জন দানকারীরা। আল্লাহর রাস্তায় যখন সমস্যা বাড়তে থাকে, পরীক্ষা কঠিন থেকে কঠিন হতে থাকে, দুঃখ দুর্দশা এবং দুশ্চিন্তার আল্লাহ তাআলা নিজ কিতাবে আপনাদেরকে সুসংবাদ শুনাচ্ছেন যে, সমস্যা এবং পরীক্ষার পরে

আল্লাহর সাহায্য প্রায় এসেই গেছে, আল্লাহ তাআলা নিজ দ্বীনের বিজয় এবং শরীয়তের প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইকারীদের এমন সময়ে সুসংবাদ শুনান যা শুনে দুনিয়াদার। অন্তরের ব্যাধিতে আক্রান্ত মানুষেরা এমন কথাকে পাগলপ্রলাপ বলে থাকে, কিন্তু যার অন্তরে আল্লাহ তাআলা ঈমান ও দৃঢ় বিশ্বাস ভরে দিয়েছেন, সে বিপদজনক থেকে বিপদজনক অবস্থাতেও নিজের রব এবং নিজের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুসংবাদের উপর এমন দৃঢ় বিশ্বাস রাখেন, যেমন মানুষ নিজ চোখে দেখা জিনিসের উপর রাখে ।

ঈমানকে তাজা করার জন্য, আত্মবিশ্বাসকে ফিরে পাওয়ার জন্য, আবেগকে গতি দেওয়ার জন্য, চলুন একটি দৃশ্য সামনে নিয়ে আসা নিয়ে যাক। এমন ভীতিকর ও কঠিন দৃশ্য যা আল্লাহ তাআলা নিজেই এভাবে বলছেন যে, গাযওয়ায়ে খন্দকের সময় মুসলমানদের কতটা কঠিন পরীক্ষায় ফেলা হয়েছিল।

إذ جاؤكم من فوقكم ومن أسفل منكم وإذزاغت الأبصار،

“যখন তারা তোমাদের নিকটবর্তী হয়েছিল উচ্চ ভূমি ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন তোমাদের দৃষ্টিভ্রম হচ্ছিল।”

ঐ দৃশ্যের বাস্তবতা আপনাদের সামনে নিয়ে আসেন, যখন মদিনা মনোওয়ারার উপর দিক থেকে শত্রুরা ঘিরে রেখেছে এবং নিচের দিক থেকেও ঘেরাও করে রাখা হয়েছে, আরব উপদ্বীপের সুপার পাওয়ার ইসলাম ও মুসলমানদেরকে মদিনাতেই দাফন করার শপথ নিয়ে বের হয়েছে, তাদের বাহির ও ভেতরের ইহুদীদের সমর্থন মিলেছে, তারা সাথে অন্যান্য আরব গোত্রকেও নিয়ে এসেছে, একইসাথে ভেতরের মুনাফিকরা এবং আরেকদিক থেকে ইহুদীরাও মুসলমানদেরকে শেষ করে দেওয়ার খায়েশ করেছিল ।

এরকম সময়েই কুরআন বলে যে, وإذ زاعت الابصار

                                    

এমন সংকটপূর্ণ অবস্থায় দৃষ্টিভ্রম হয়, وبلغت القلوب الحناجر  এবং জীবন গলায় চলে আসে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শরীয়ত কি শেষ করে দেওয়া সম্ভব? আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দেওয়া শাসনব্যবস্থাকে কি শেষ করে দেওয়া সম্ভব, যে শরীয়তকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যে দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য গাযওয়ায়ে উহুদ এবং অন্যান্য গাযওয়া ও সারিয়্যাতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিবেদিত প্রাণ সাথীদের মূল্যবান রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, এগুলো সব কি বৃথা চলে যাবে?

শত্রু সৈন্যরা আসার আগে সাহাবাগণ রা. পরিখা খননে ব্যস্ত । মদিনার সর্দার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নিজের সাথীদেরকে তীব্র শীত এবং ক্ষুধা পিপাসার মতো জীবন ধারণের মৌলিক জিনিসের অভাবে, ক্লান্তির কারণে বেহাল অবস্থায় দেখলেন, তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনাদের জন্য দু'আ করা শুরু করেন। তিনি বলেন-

اللهم إن العيش عيش الآخرة * فاغفر الأنصار وَالْمُهَاجِرَة.

“হে আল্লাহ! জীবন তো আখিরাতেরই জীবন, তাই আপনি আনসার ও মুহাজিরদের ক্ষমা করুন আর তাঁদের জন্য আখিরাতের জীবনকে সুশোভিত করে দিন।”

শরীয়তের জন্য এই মাতালরা অনুভব করেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, সাহাবায়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চস্বরে বলে উঠলেন-

نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا * عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِينَا أَبَدًا.

হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো ঐসব লোক, যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জিহাদের বায়আত করেছি। আমরা এই রাস্তায় নিজেদের জীবন কুরবানি করে দেব। মদিনার সর্দার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সাথীদের সাথে দাঁড়িয়ে আছেন ।

হযরত সালমান ফারসি রা. খন্দক খনন করছেন। খন্দক খনন করতে করতে এক বড় প্রস্তরখণ্ড আসল, যার কারণে কোদালও ভেঙে গেলো। হযরত সালমান ফার্সি রা. মদিনার সর্দারের সেবায় হাজির হলেন এবং বললেন যে, বড় এক প্রস্তরখণ্ড এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন, কোদাল হাতে নিলেন এবং বড় এই প্রস্তরখণ্ড ভাঙতে শুরু করলেন, পাথর থেকে আলো ছড়িয়ে পড়লো, রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুখ থেকে তাকবীরের কালিমা বুলন্দ হলো।

এরপর দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বারও এমন আলো ছড়িয়ে পড়লো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ থেকে তাকবীরের ধ্বনি বুলন্দ হলো। হযরত সালমান ফার্সি রা. ও অন্যান্য সাহাবা রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই কথার স্মরণ করলেন এবং এই আলোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথমবার আমাকে হেরা এবং কিসরার শহরদেখানো হয়। আর জিব্রাঈল আ. বললেন, আমার উম্মত এগুলো জয় করবে, দ্বিতীয় আলোর ছটায় রোমীয় সাম্রাজ্যের লাল প্রাসাদগুলো আলোকিত হয় এবং জিব্রাঈল আ. আমাকে বললেন, আমার উম্মত এগুলোও জয় করবে, তৃতীয় আলোর ছটায় ইয়েমেনের প্রাসাদগুলো দৃষ্টিতে আসে এবং জিব্রাঈল আ. এগুলো বিজয়ের সুসংবাদ শুনান ।

 

 হে আমার মুজাহিদ সাথীরা!

এরকম নাজুক সময়ে এই সুসংবাদ এমন ছিল যার উপর শুধু ঐ ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে পারে যার অন্তরকে আল্লাহ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শরীয়তের জন্য খুলে দিয়েছিলেন।

তা না হলে রোগাক্রান্ত অন্তরের অধিকারী এটা ছাড়া আর কি বলতে পারতো যে, এর অবস্থা দেখো, পুরো আরব অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে এসেছে আর এই অবস্থায় এদের খাবার, রুটির টুকরাও সহজে মিলছে না, পেটে পাথর বেঁধে ঘুরছে; মদিনা থেকে বের হয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়, এদের বাঁচার কোন রাস্তাও অবশিষ্ট নেই; কিন্তু এদের বুলি দেখো, এরকম জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় এরা রোম ও পারস্য জয় করবে! কতটা বিস্ময়কর কথা। এরকম অবস্থা শুধু আমাদের উপর আসেনি।

আল্লাহ তাআলা এমন অবস্থা মুসলমানদের উপর নিয়ে আসেন যাতে খারাপ ভাল আলাদা করে দেওয়া যায়। সত্য এবং মিথ্যা দেখে নেওয়া যায়। আবার মনে রাখুন এই পরীক্ষা যখন এই পর্যায়ে পৌঁছিয়ে যায় যে, অবস্থা وزلزلوازلزالاشديدا এর মত হয়ে যায়, অবস্থা এমন হয়ে যায় যে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেওয়া হয়, حتى يقول الرسول والذين امنوا معه এর এত প্রচণ্ড ঝাঁকুনি যে রাসূল এবং তাঁর উপর ঈমানদাররা চিৎকার করে,متى نصر الله! আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? এই সাহায্যের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস তো আছে, কিন্তু এই সাহায্য কখন আসবে? এরপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা হয় সুসংবাদের الا শুনে রাখো! إن نصر الله قريب আল্লাহর সাহায্য কাছেই আছে। আল্লাহ তাঁর শরীয়তের জন্য জীবন নিঃশেষ করে দেওয়া মানুষকে কখনও একা ছাড়েন না, দৃঢ় বিশ্বাস রাখো, এমন মানুষের জন্য সাহায্য শীঘ্রই আসবে।

কাজেই! হে কুরআন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রাখা লোকেরা! হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়তের মাতালরা! নিজেদের সন্তানদেরও এই রাস্তায় ঘরছাড়া করা লোকেরা! পরীক্ষা লম্বা হয়ে যাওয়া যেন তোমাদের নিরাশ না করে, শরীয়তের শত্রুদের তর্জন গর্জন যেন উদ্বিগ্ন না করে। বিশ্বাস রাখো! পরিবেশ যতই প্রতিকূল হোক না কেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা গাযওয়ায়ে খন্দকের মত হোক না কেন, মনে রেখো আল্লাহর ওয়াদা- তাঁর শরীয়তকে বিজয়ী করার জন্য যে লড়াই করবে, তাঁর কালেমাকে বিজয়ী করার জন্য যে লড়াই করবে, আল্লাহ তাকে অবশ্যই সাহায্য করবেন।

আপনারা কি দেখেননি, আমেরিকার গোলামী করতে করতে শরীয়তের শত্রু সেনাবাহিনী ওয়াজিরিস্তান পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আজ সেই আমেরিকার কি অবস্থা হতে চলেছে, চরিত্র ও সম্মানের ধারক ও বাহক আমেরিকার চারিত্রিক অবস্থার লাশ দুনিয়া এই নির্বাচনে বের হয়ে আসতে দেখেছে এবং এ তো শুরু, অচিরেই আপনাদের রবের সাহায্য ও নুসরতের ধরণ দেখতে থাকুন।

আমেরিকা শুধু আফগানিস্তান থেকে পালাচ্ছে এমনটি নয়, বরং ইনশাআল্লাহ সিরিয়ায় মুসলিম উম্মতের সন্তানদের আঘাতে আমেরিকা দুনিয়ার নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়ে শীঘ্রই পালিয়ে যাবে। “সবার আগে আমেরিকা” এই শ্লোগান তো এই ধারাবাহিকতার প্রথম কিস্তি; আর যদি আল্লাহ একে পুরোপুরি পাকড়াও করার ফয়সালা করে থাকেন তো আমেরিকা শুধু বিশ্বের নেতৃত্ব থেকেই পালাবে না বরং আমেরিকার নিজের অস্তিত্বও দুনিয়ার মানচিত্রে এমনভাবে চোখে পড়বেনা যেমনটা আজ চোখে পড়ে। অর্থাৎ অধিকৃত সংযুক্ত রাষ্ট্রগুলোর চেহারায় একটি দেশ উত্তর আমেরিকার মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে।

এসব অধিকৃত রাষ্ট্রগুলোও একে ছেড়ে পালিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ । এই সেই আমেরিকা, যে ইসলামী ইমারতের উপর হামলা করার জন্য এসেছিল এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী এর কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে মুসলমানদেরকে হত্যা করা নিজেদের জন্য হালাল করে নিয়েছিল; ঐ সময় ইসলামের বিরুদ্ধে লোকদের কথা কতটা ধারালো ছিল! এখন তালেবানের ইসলামের কি হবে, এখন তাদের জিহাদের কি হবে, জিহাদের কি লাভ হল, আমেরিকার সাথে সংঘাতে লিপ্ত হওয়া কোন শরীয়তে জায়েজ?

কিন্তু যাদের আল্লাহর ওয়াদার উপর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তারা ঐ সময়েও বাগরামের যুদ্ধ ময়দানে যুদ্ধ বিমানের বোমাবর্ষণের মাঝে দৃঢ় থেকে এই শ্লোগান দিচ্ছিল هذا ما وعدنا الله ورسوله এটা ঐ যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদের সাথে প্রতিশ্রুতি করেছিলেন, তারা ঐ সময়েও বলছিল যে, আমেরিকা আত্মাহুতি দেওয়ার জন্য আফগানিস্তানে এসেছে। এসব আল্লাহর সাহায্য এবং এই উম্মতে মুহাম্মাদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জিহাদের উপর দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকার ফল ।

সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধেও আল্লাহ এই জিহাদের কারামাত দুনিয়াকে দেখিয়েছেন কিন্তু মিথ্যাচার ও প্রতারণার গণতান্ত্রিক বিশ্ব একে আমেরিকার সাহায্য হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছে এবং উম্মতকে জিহাদ থেকে ফিরিয়ে রাখতে চেয়েছে, কিন্তু এই আমেরিকার অপমানজনক পরাজয় কিভাবে হলো? জীবিকা বণ্টন করার দাবিদার আমেরিকা নিজে আজ কেন দারিদ্র্য ও দেউলিয়ায় জর্জরিত হয়ে কাঁদছে।

জীবন ও মৃত্যুর বণ্টন করার দাবিদার আমেরিকা আজ নিজের প্রতিরক্ষা করতে অক্ষম হয়ে গেছে, এর কেন্দ্রীয় সেনা ছাউনি বাগরামেও মৃত্যু এর পিছু ছাড়েনি। অন্তরের ব্যাধিতে ব্যাধিগ্রস্তরা জিহাদের কারামতকে যদি এখনও মেনে না নেই, সে এটাই বলবে যে এটা চীনের সাহায্য, চীন আমেরিকাকে পরাজিত করেছে। তাই এদের অন্তর জ্বলছে আর জ্বলছে এবং আর এই দহন দেখেই হয় এদের অন্তর প্রশান্ত হবে নতুবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতের অন্তর প্রশান্ত হবে ।

 

হে আমার ভাইয়েরা!

এই রবের সত্তার উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখুন। শুধু এই এক সত্তারই ইবাদত করুন। তাঁর সাথে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শরীক করবেন না, শুধু তিনি ইবাদতের যোগ্য। যেই আল্লাহ ইসলামী ইমারতের সাহায্য করেছেন, যিনি অসহায় ও দেশান্তরের পরে তাঁদেরকে সুদৃঢ় করেছেন এবং দ্বিতীয়বার শরীয়ত প্রতিষ্ঠার শক্তি দিয়েছেন, ঐ রব চিরঞ্জীব (حي) শাশ্বত ((قيوم)। যদি তোমরাও এই শরীয়ত মোতাবেক উনার শরীয়তের প্রতিষ্ঠার জন্য নিজ কিতালকে জারি রাখো। নিজেদের সারিতে একতা ও ঐক্যবদ্ধতাকে ধরে রাখো তাহলে ঐ রব অবশ্যই তোমাদের সাহায্য করবেন।

 

ঐ রব পাকিস্তানের মুসলমানদের শরীয়তের ভালবাসা, দ্বীনের সাথে লেগে থাকা এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শাসনব্যবস্থার সাথে যুক্ত লোকদের ভাল করে জানেন। আল্লাহর শরীয়তের সাথে যুদ্ধ করে শরীয়তের শত্রু শাসকগোষ্ঠী কোথায় আশ্রয় নিতে পারবে? কোনো নতুন অথবা পুরনো সুপার পাওয়ার একে আল্লাহর মোকাবিলায় আশ্রয় দিতে পারবে না ।

শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য যে কুরবানি পাকিস্তানিরা দিয়েছে, বালাকোটের আন্দোলন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত উম্মতের সন্তানদের যে রক্ত এই জমিনে প্রবাহিত হয়েছে, যে জুলম এই রাস্তায় আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মুসলমানরা সহ্য করেছে, ইনশাআল্লাহ এসব বৃথা যাবে না । হক্বপন্থী উলামায়ে কেরামদের যে রক্ত এই জমিনে প্রবাহিত হয়েছে, তা অবশ্যই সুফল নিয়ে আসবে।

রায়েবেরেলি ও দিল্লী থেকে চলা শুরু করে বালাকোটের উপত্যকাকে নিজেদের রক্ত দিয়ে সিক্ত করা সৈয়দ আহমাদ শহীদ রহ. ও শাহ ইসমাইল শহীদ রহ. এর রক্ত হোক অথবা হক্ব নেওয়াজ জংভী শহীদ রহ. এবং উনার বীরদের রক্ত, ডক্টর হাবিবুল্লাহ মুখতার শহীদ রহ., মুফতি নিযামউদ্দীন শামজায়ী শহীদ রহ., মুফতি আব্দুল মাজেদ দ্বীনপুরি শহীদ রহ., মুফতি আতিকুর রহমান শহীদ রহ. এর রক্ত হোক অথবা মাওলানা আবদুল্লাহ শহীদ রহ. এবং উনার পুত্র গাজী আব্দুর রশীদ রহ. এর রক্ত, মানবতার জন্য উপহার শায়খ উসামা বিন লাদেন রহ. এর রক্ত হোক, অনেক দীর্ঘ ও সোনালী ইতিহাস।

এই সংক্ষিপ্ত সময়ে উনাদের হক্ব আদায় করাও সম্ভব নয়, কিন্তু শহীদদের রব তো উনাদের সবার নাম জানেন। কত হাফেয এবং ক্বারী আছেন যারা নিজেদের বুকে রক্ষিত কুরআনকে এই দেশে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবন কুরবানি করেছেন। এঁদের রব, না নিজের ওয়ালীদের কুরবানির ব্যাপারে গাফিল, আর না তিনি জালেমদের জুলমের ব্যাপারে গাফিল, না উনি গাফিল শরীয়তের প্রতি শত্রুতার ব্যাপারে, আর না গাফিল শরীয়ত প্রতিষ্ঠার প্রতি শত্রুতার ব্যাপারে।

শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার নামে গঠিত হওয়া পাকিস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য উম্মতের সন্তানদের কুরবানি আজও জারি আছে। আলহামদুলিল্লাহ্ ‘যরবে আযব' এর পরেও এই আবেগকে ঠাণ্ডা করতে পারেনি। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদদের এক কাফেলার পর আরেক কাফেলা জীবন কুরবানি করে যাচ্ছে। নিজের চোখে দেখা মৃত্যুর সওদা করে যাচ্ছে। তারা জানে যে, এখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে আছে আমেরিকান ড্রোন, আমেরিকার হামলা অভিযান, আমেরিকান কমাণ্ডো। কিন্তু তাদের পা পিছলে যায়নি। وما بدلو تبديلا  অর্থাৎ তারা তাদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। তারা ‘হয় শরীয়ত, নয় শাহাদাত' এর যে শ্লোগান দিয়েছিল, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার যে শ্লোগান দিয়েছিল, তা থেকে পিছু হটেনি।

এই অতিবাহিত সময়ে অসংখ্য মুজাহিদ নিজেদের জীবনকে আল্লাহর সামনে পেশ করেছেন। ডেরা ইসমাইল খানের সাথে সম্পর্কিত আমাদের সম্মানিত ভাই উস্তাদ আলীও রহ. নিজ জীবনের লম্বা সময় জিহাদে অতিবাহিত করে এই রাস্তায় শাহাদাতের শুধা পান করেন। কাশ্মীর, ইসলামী ইমারত আফগানিস্তান এবং শরীয়তের নামে অর্জিত নিজের দেশ পাকিস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার অপরাধের জন্য পরাশক্তির টার্গেটে পরিণত হোন। একইভাবে ক্বারী আজমলকে রহ. ربنا الله অর্থাৎ ‘আমাদের রব আল্লাহ' শ্লোগান দেওয়ার অপরাধে শহীদ করে দেওয়া হয় ।

আমাদের হক্ব উলামায়ে কেরামদের কাফেলার পথিক, আল্লাহর কিতাবের প্রত্যেক আয়াত খুলে খুলে বয়ান করার অপরাধে কারাবরণকারী, পূর্বসূরিদের সুন্নতের পুনর্জীবন দানকারী, মাওলানা ইশতিয়াক সাহেব শহীদ রহ. ওরফে মাওলানা আবু মুহাম্মাদ আজমী ওরফে মাওলানা খুবাইব সাহেব (করাচী) উলামাদের সেই প্রতিশ্রুতিকে পূরণ করেছেন যা আল্লাহ উলামাদের থেকে নিয়েছেন- আল্লাহর কুরআনের কোন হুকুমকে গোপন করা যাবেনা এবং শুধু এই ব্যাপারে আল্লাহকেই ভয় পাবে, উনি ছাড়া আর কাউকে ভয় পাবে না।

কুরবানির ঈদে আল কায়েদা উপমহাদেশের শুরা সদস্য এবং আস-সাহাব এর দায়িত্বশীল, মিডিয়ার দুনিয়ার নামবিহীন সিপাহশালার, উসামা ইব্রাহীম রহ. ওরফে আমজাদ ভাই (ইসলামাবাদী), পাকিস্তানি বাহিনীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আফগানিস্তানের জাবুলে আমেরিকার হামলায় শাহাদাতের শুধা পান করেন। আল্লাহ তাআলা উনাদের সবার শাহাদাতকে নিজ দরবারে কবুল করুন এবং উম্মতের মায়েদের গর্ভে উসামা ইব্রাহীমদের মত সুপুত্রের জন্ম দেন।

আস-সাহাব উর্দু এবং এরপর আস-সাহাব উপমহাদেশের প্রাণ, অসংখ্য গুণের অধিকারী, এই বীরপুরুষ এমন ছিলেন যে, কয়েক মাস আগে কান্দাহারে শরীয়তের শত্রুদের চৌকিতে অসীম সাহস নিয়ে হামলা করেন এবং শত্রুদের দাঁত ভেঙে দেন ।

শুধু পাকিস্তানে নয়, বরং আলহামদুলিল্লাহ্ পুরো উপমহাদেশে মুসলিম উম্মতের বীরেরা নিজেদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শরীয়তের জন্য নিজেদের সবকিছু কুরবানি করে দিচ্ছে। নিজেদের জীবন আল্লাহর সামনে পেশ করে, দেশের গণ্ডীতে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া উম্মতের দেহকে এক উম্মতের লড়াইয়ে পরিণত করার জন্য নিজেদের শরীরকে জীর্ণশীর্ণ করে ফেলছে।

ঢাকার রঙিন জীবন ছেড়ে ওয়াজিরিস্তানে হিজরত করা আমাদের প্রিয় ভাই, তারেক ভাই রহ., এই আশায় কান্দাহারের মরুভূমিকে নিজের রক্ত দিয়ে সিক্ত করে গেছেন যে, বাংলাদেশের মাটিতে আবার ইসলামী শাসনব্যবস্থা ফিরে আসে। উনার সাথে উনার অন্যান্য সাথী ক্বারী আব্দুল আযিয রহ., ইয়াকুব ভাই রহ., আসাদুল্লাহ ভাই রহ. এবং আবু ইব্রাহীম ভাই রহ., আবু বকরও রহ. শাহাদাতের শুধা পান করেন।

একইভাবে হায়দ্রাবাদ দাক্কান থেকে আসা আমাদের প্রিয় সাথী ক্বারী উমর রহ. ওরফে হাম্মাদও নিজ জাতিকে নিজের রক্ত দিয়ে জাগিয়ে তোলার জন্য ভারতের মাটিতে ইসলামের বিজয়ের আশায়, কান্দাহারের মরুভূমিতে রবের কাছে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে গেছেন। এছাড়াও গোমেল এবং অন্যান্য প্রদেশের ভেতর আমাদের অনেক প্রিয় প্রিয় সাথীরা এই রাস্তায় শাহাদাতের শুধা পান করেছেন। আল্লাহ তাদের সবার সম্পর্কে জানেন, আল্লাহ তাআলা তাদের সবার শাহাদাত কবুল করুন।

এই কথা চিন্তা করা উচিত যে, এই সব শাহাদাত আফগানিস্তানে আমেরিকার হামলা অভিযানের সময় হয়েছে। এ থেকে এ কথা বোঝা যায় যে, আমেরিকাও চাই না পাকিস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠা হোক। সে প্রত্যেক অবস্থায় শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করাকে বন্ধ করতে চায় আর এরই ধারাবাহিকতায় সে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সাহায্য করছে। এ থেকে এ কথাও বোঝা যেতে পারে যে, দুনিয়া জুড়ে কুফর ও ইসলামের মাঝে যে যুদ্ধ জারি আছে, সেটা জীবনব্যবস্থার যুদ্ধ, ইসলামী জীবনব্যবস্থা বনাম গণতান্ত্রিক জীবনব্যবস্থার যুদ্ধ ।

শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সব দেশভিত্তিক রাষ্ট্র একই অবস্থানে- যারা শরীয়ত চায়, তাদেরকে তছনছ করতে হবে। তাদের অস্তিত্বকে শেষ করে দিতে হবে। তাদেরকে নিজ নিজ দেশ থেকে বের করে দিতে হবে। আমেরিকা হোক অথবা ইসরায়েল, আফগানিস্তানের মুরতাদ সেনাবাহিনী হোক অথবা মিশরীয় সেনাবাহিনী। ভারত হোক অথবা শরীয়তের নামে হওয়া পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। শরীয়ত প্রতিষ্ঠাকে সবাই এভাবেই ঘৃণা করে, সবাই একইরকম, সবার চেষ্টাই হলো যেভাবেই হোক নিজেদের দেশে শরীয়ত প্রতিষ্ঠিত না হোক ।

নিজস্ব গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে এরা সবকিছু করতে প্রস্তুত। এজন্যই তারা একজন আরেকজনকে সাহায্য করে যাচ্ছে, কাজের বিনিময় হচ্ছে, কিন্তু এরা জানেনা যে, আল্লাহর পরিকল্পনাই বিজয়ী হয়, ( ليميز الله الخبيث من الطيب يجعل الخبيث بعضه علي بعض ) যাতে আল্লাহ অপবিত্রকে পবিত্র থেকে আলাদা করেন এবং সমস্ত  অপবিত্রকে একত্রিত করেন এবং একইসাথে পুনরুত্থিত করেন। এরা যতই চাক মিথ্যাচার, প্রতারণা ও কপটতা করুক, এ যুদ্ধে এরা হেরে গেছে।

বাস্তবতা এই যে, বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা এবং এর রক্ষক শক্তিগুলো, হোক তা বৈশ্বিক বা স্থানীয়, যুদ্ধ হেরে গেছে। এরা যে জীবনপদ্ধতির রক্ষক, যে লাইফ স্টাইলের রক্ষক, যে জীবনব্যবস্থার রক্ষক ইনশাআল্লাহ তা অবশিষ্ট থাকবে না। এটা ধ্বসে পড়বেই, বিলুপ্ত হয়ে যাবেই ।

দেশভিত্তিক জাতিতে বিভক্ত উম্মত এখন এক উম্মত হয়ে যাবে। এই উম্মতকে এখন দাবিয়ে রাখা যাবে না। বৈশ্বিক কুফরি শক্তি এবং এর স্থানীয় এজেন্ট, এই উম্মতকে রহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা জীবনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করা থেকে থামিয়ে রাখতে পারবে না ।

যেই উম্মতের মায়েরা নিজেদের কলিজার টুকরাকে নিজে তৈরি করে যুদ্ধের ময়দানে পাঠাতে থাকে, বোনেরা শহীদ ভাইদের শাহাদাতকে নিজেদের জন্য মর্যাদা মনে করে, বাবা-চাচারা নিজেদের রক্তের উপর এজন্য গর্ব করতে থাকে যে তাঁদের বীর যুবকেরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনা শরীয়তের জন্য কুরবানি হয়েছে, আল্লাহর কসম এমন উম্মতকে এখন আর দাস বানিয়ে রাখা যাবে না ।

এই উম্মতকে এখন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনা জীবনব্যবস্থা থেকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না। হতে পারে কোথাও কাল, কোথাও পরশু, কোথাও কিছুদিন পরে। কিন্তু এই উম্মত এক উম্মত হয়ে যাবেই এবং ইংরেজদের এজেন্ট, সাম্রাজ্যবাদীদের এজেন্ট, কুফরের এজেন্টরা অপমানিত হবেই। এই উম্মতকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনা জীবনব্যবস্থা থেকে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়।

কাজেই আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা!

নিজেদের এই শহীদ ভাইদের রক্তের প্রতি বিশ্বস্ততা দেখানো এবং আল্লাহর কাছে কৃত ওয়াদাকে প্রত্যেক অবস্থায় পূরণ করার সফলতা শুধু তাদের জন্য যারা এই সওদা করার পরে এর উপর নিজের জীবন কুরবানি করে যায়।

কেন উদ্বিগ্ন হচ্ছো! আরে তোমরা উদ্বিগ্ন কেন হচ্ছো, তোমাদের প্রত্যেক চোখের পলক, প্রত্যেক নিঃশ্বাস, তোমাদের দুইটি সফলতার একটির কাছে নিয়ে যাচ্ছে –

إما الفتح و إما الشهادة إحدى الحسنيين

দুইটির মধ্যে একটি সফলতার দিকে হয় বিজয় না হয় শাহাদাত, প্রত্যেক অতিবাহিত চোখের পলক, প্রত্যেক অতিবাহিত রাত, প্রত্যেক অতিবাহিত নিঃশ্বাস তোমাদেরকে দুইটি সফলতার একটির কাছে নিয়ে যাচ্ছে।

যদি তুমি কারাগারে হও, যদি তুমি সেলে হও, যদি তুমি স্বাধীন হও, যদি তুমি বোমাবর্ষণের ভেতরে হও, যদি ড্রোনের ছায়া তোমাদের মাথার উপরে হয়, যতই সমস্যার মধ্যে তোমরা থাকনা কেন, বিশ্বাস রাখ! তোমরা দুইটি সফলতার মধ্যে একটির দিকে অগ্রসর হচ্ছো। যদি তোমরা এই রাস্তার উপর চলতে থাকো, নিজের রবের সাথে ওয়াদা পূরণ করে যাও, নিজ রবের সাথে যে সওদা করেছো, তা পূরণ কৃত করো। তাহলে তোমরা প্রত্যেক অবস্থায় সফল, তোমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কি দরকার?

শরীয়তের শত্রুসেনাদের এমন দাপটের সাথে ঘোরাঘুরি, শরীয়ত চাওয়ার অপরাধে তোমাদের বাসার উপর বোমাবর্ষণ, তোমাদের মেয়েদের গ্রেফতার করে টর্চার সেলে ছুঁড়ে ফেলা, এসব দেখে নিজ রবের রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য কিতালকারীদের মোকাবিলায় আমেরিকা এবং তার সব জোট ইনশাআল্লাহ এমন অপমানিত হবে যেমন আমেরিকা অপমানিত হচ্ছে। রুটির টুকরোর জন্য তাদের বংশধরেরা ভিক্ষা করবে।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত সম্মান পাবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা দ্বীন বিজয়ী হবে, الاسلام يعلوا ولا يعلي অর্থাৎ ইসলাম এই দ্বীন বিজয়ী হয়ে টিকে থাকবে, এখন এটা পরাজিত হতে পারে না। উম্মত জেগে উঠেছে, পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, এই উম্মত একসাথে ঐক্যবদ্ধ হবে। দ্বীনি শক্তি, ইসলামী শক্তি বিজয়ী হবে। কুফরি শক্তি, সেকুল্যার শক্তি এবং মুনাফিক শক্তি অপমানিত ও হীন হয়ে থাকবে। নিজেদের চোখে ইনশাআল্লাহ তোমরা এটা দেখবে।

 

হে আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গকারীরা! তোমরা শোকাহত কেনো হচ্ছো? উদ্বিগ্ন কেনো হচ্ছো? তোমাদের রব তোমাদের সুসংবাদ শোনাচ্ছেন, তোমাদের সত্য কুরআন তোমাদের সান্ত্বনা দিচ্ছে-

ولا تهنوا ولا تحزنوا

অর্থাৎ “আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখ করো না”, আরে তোমরা দুর্বল হয়ো না শাহাদাতের খবর শুনে শুনে, গ্রেফতারের খবর শুনে শুনে, হামলা অভিযানের খবর শুনে শুনে, নিজেদের লোকসানের খবর শুনে শুনে, আজ অমুক শহীদ হয়ে গেছে, আজ অমুক গ্রেফতার হয়ে গেছে, আজ অমুক শহীদ হয়ে গেছে, আজ এত সাথী শহীদ হয়ে গেছে।

ইসলামী ইমারতের ইতিহাসের কথা মনে করো, আফগানিস্তানের জিহাদের কথা মনে করো, এই জাতি কত কুরবানি দিয়েছে, নিজেদের দেশে ইসলাম নিয়ে আসার জন্য মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীনকে বিজয়ী করার জন্য, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শরীয়তকে বিজয়ী করার জন্য । কিন্তু আজ একবার দেখ- গ্রামের পর গ্রামে, বসতির পর বসতিতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বীন বিজয়ী। আমেরিকা এবং এর এজেন্ট, শরীয়তের প্রতি ঘৃণা পোষণকারীরা, শরীয়ত প্রতিষ্ঠার পথে বাঁধা প্রদানকারীরা হীন ও অপমানিত হচ্ছে। মাথা গোঁজার ঠাই মিলছেনা, কেউ দিল্লীতে যেয়ে আশ্রয় নিচ্ছে, কেউ পেশাওয়ার যেয়ে আশ্রয় নিচ্ছে, কেউ ইসলামাবাদ যেয়ে আশ্রয় নিচ্ছে।

আফগানিস্তানে তাদের জন্য জায়গা নেই। আল্লাহ নিজের শরীয়তকে বিজয়ী করেছেন, এই কুরবানির পরে, লাখো শহীদের কুরবানির আল্লাহ এই শরীয়তকে এই দুনিয়ার উপর বিজয়ী করেছেন। কাজেই তোমরা উদ্বিগ্ন হয়ো না, দুর্বল হয়ো না আর দুশ্চিন্তা করোনা, তোমরাই বিজয়ী হবে।

 انتم الاعلون إن كنتم مؤمنين যদি তোমাদের জিহাদ আল্লাহর বলে দেওয়া পদ্ধতি মোতাবেক থাকে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বলে দেওয়া পদ্ধতি মোতাবেক জারি থাকে, না তোমরা দুর্বল হবে, না পিছু হটবে, না কাপুরুষতা দেখাবে আর না জীবন দেওয়া থেকে ঘাবড়িয়ে যাবে, ولا تهنوا ولا تحزنوا وانتم الاعلون ان كنتم مؤمنين অর্থাৎ আর তোমরা দুর্বল হয়ো না এবং দুঃখ করো না, তোমরাই জয়ী হবে যদি তোমরা মুমিন হও। দুনিয়া তোমাদের পায়ের তলে।

 

দুনিয়ার শাসনক্ষমতা তোমাদের হাতে দেওয়ার মালিক আল্লাহ, দুনিয়ার নেতৃত্ব তোমাদের হাতে শীঘ্রই আসবে। আমরা না থাকি, এই উম্মতের ছেলেরা, এই উম্মতের সন্তানেরা ইনশাআল্লাহ ইসলামের বসন্ত দেখবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়তকে বিজয়ী হতে দেখবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই উম্মতকে সম্মানের অধিকারী, সুউচ্চ অবস্থানে দেখা যাবে এবং ইসলামের শত্রু অপমানিত হবে, ইসলামের শত্রু পরাজিত হবে। এই সময় কাছাকাছি এসে গেছে, তোমরা নিজ চোখে দেখছ আল্লাহ তাআলা বিজয়ের ধারাবাহিকতা খুলে দিয়েছেন।

আলহামদুলিল্লাহ্ ওয়াজিরিস্তানের পর আল্লাহ তাআলা পাকিস্তানের মুজাহিদদের জন্য পুরো আফগানিস্তান খুলে দিয়েছেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা পুরো জমিন মুহাজিরদের আবাসস্থল বানিয়ে দিয়েছেন। ওখানে আল্লাহর এই সিংহরা ইসলামী ইমারতের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে, জীবন উৎসর্গ করছে, বিজয়ে অংশ নিচ্ছে, আল্লাহ তাদের গণিমত দিচ্ছেন, এই সময়ের মধ্যে আল্লাহ মুহাজিরদেরকে, পাকিস্তানি মুহাজিরদেরকে, তুর্কিস্তানি মুহাজিরদেরকে, আরব মুহাজিরদেরকে আল্লাহ এত গণিমত দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ তাআলা সবদিক থেকে বিজয় দান করেছেন । আল্লাহ তাআলা এই জমিনের মাধ্যমে ইসলামকে বিজয়ী করবেন।

আল্লাহ তাআলা এই জমিনের মাধ্যমে পাকিস্তানি মুজাহিদদের, পাকিস্তানি মুহাজিরদের বিজয়ী করবেন। আল্লাহ তাআলা ইনশাআল্লাহ এই জমিনের মাধ্যমে অন্যান্য মুহাজিরদের বিজয়ী করবেন। এটা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি।

এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। هنالك ابتلى المومنون আল্লাহ নিজে ঘোষণা  করেছেন যে পরীক্ষা করা হয়েছে, সাহাবাদের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছে যাদের অন্তরে তাকওয়া ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি, اولئك الذين امتحن الله قلوبهم অর্থাৎ  তারা হল ঐসব লোক যাদের অন্তরকে আল্লাহ তাক্বওয়ার জন্য শোধিত করেছেন। এরপরে ঘোষণা হচ্ছে- هنالك ابتلى المومنون وزلزلوا زلزالا شديدا অর্থাৎ সে সময়ে মুমিনরা পরীক্ষিত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হচ্ছিল।

হে রাহমাতুল লিল আলামিন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীয়তের জন্য জীবন উৎসর্গকারীরা! হে এই ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য নিজ ঘরবাড়ী ত্যাগকারী! এবং নিজ সন্তানদেরও নিজের সাথে নিয়ে ভ্রমণকারীরা! হে গৃহহীনেরা! উদ্বিগ্ন হয়ো না, ঘাবড়িয়ে অর্থাৎ মুমিনরা যেওনা, هنالك ابتلى المومنون وزلزلوا زلزالا شديدا এভাবে পরীক্ষিত হয় এবং ভীষণভাবে প্রকম্পিত হয়; কিন্তু এরপরেই متى نصر الله  অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য কিভাবে আসবে তা উপলব্ধিতে আসে, الا ان نصر الله  قريب، الا ان نصرالله قريب، الا ان نصرالله قريب  অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য একান্তই নিকটবর্তী।

আল্লাহর আয়াতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিশ্রুতির উপর ইয়াক্বীন রাখো। তোমরাই বিজয়ী হবে। তোমাদের দ্বীনই বিজয়ী হবে। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনব্যবস্থাই বিজয়ী হবে। কাজেই এই রাস্তার উপর দৃঢ় থাকো। আল্লাহর কাছে চাইতে থাকো। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ট করতে থাকো এবং উনার কাছে চাইতে থাকো ।

নিশ্চিত জেনে রাখো! আল্লাহর সাহায্য শীঘ্রই আসবে। নিশ্চিত জেনে রাখো! আল্লাহর সাহায্য শীঘ্রই আসবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের শরীয়তের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গকারী বানিয়ে দিন, আল্লাহ তাআলা এই শরীয়তের রাস্তায় আমাদের জীবনকে কবুল করেন এবং নিজ দ্বীনকে বিজয়ী করেন। নিজ হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিয়ে আসা শরীয়তকে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর বিজয়ী করেন। আর আমাদের সর্বশেষ বাণী হল সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দরকার সফরের দৃঢ়তা: গন্তব্য সামান্য দূরে

 

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين ، وعلى آله وصحبه أجمعين ، اما بعد أعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم وقال سبحانه وتعالي :

 

وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّن دَعَا إِلَى اللهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ

“আর ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে আহবান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের মধ্য হতে একজন।” [সুরা ফুসসিলাত: ৩৩]

 

فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُودُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ تَوَابًا مِّنْ عِندِ اللّهِ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ

“সুতরাং যারা হিজরত করেছে, স্বীয় ঘর-বাড়ি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে, যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেয়া হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে।....আমি অবশ্যই তাদের গুণাহসমূহ মুছে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ; ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।” [আল ইমরান- ১৯৫]

আল্লাহর রাসুল বলেছেন -

أفضل الجهاد كلمة حق عند سلطان جائر

 

 

“উত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলা”। [তিরমিযী]

يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانُ الصَّابِرُ فِيهِمْ عَلَى دِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ

রাসুল সা. আরো বলেন- “মানুষের উপর এমন যামানা আসবে, যখন স্বীয় দ্বীনের উপর অবিচল ব্যক্তি হবে হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণকারীর ন্যায়।” [তিরমিযী]

 

দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে হকের কালিমা উচ্চারণকারী ভাইয়েরা! আমার মা ও বোনেরা! মদীনার সম্মানিত সর্দার সা. বলেছেন- “মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে, যখন পুরো দ্বীনের উপর জমে থাকা এমন হবে, যেমন জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে ধারণ করা । ”

মোল্লা আলী ক্বারী রহ. বলেন- “হাদীসের মর্ম হলো, যেমনিভাবে হাতের মুষ্টিতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা সীমাহীন ধৈর্য ও ভীষণ কষ্ট ব্যতীত সম্ভব হয় না, তেমনিভাবে ঐ যামানায় নিজের পুরো দ্বীনকে হেফাজত করা এবং ঈমানী নূরকে বাঁচানো সীমাহীন ধৈর্য ব্যতীত সম্ভব হবে না।

চির সত্যবাদী নবী করীম সা. পূর্বেই বলে দিয়েছেন-

الصَّابِرُ فِيهِمْ عَلَى دِينِهِ كَالْقَابِضِ عَلَى الْجَمْرِ

“সে সময় স্বীয় দ্বীনের অবিচল ও অটল ব্যক্তি হবে জ্বলন্ত অঙ্গার হস্তে ধারণকারীর ন্যায়।”

যখন দ্বীনকে দুভাগে বিভক্ত করে ফেলা হবে, একটি হবে ব্যক্তিগত (বা প্রাইভেট) দ্বীন, আরেকটি হবে রাষ্ট্রীয় দ্বীন।

ব্যক্তিগত দ্বীনের উপর আমল করার ব্যাপারে প্রত্যেকেই স্বাধীনতা থাকবে; রাষ্ট্র কারো ব্যক্তিগত জীবনযাপনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি কোনো ব্যক্তি নামাযী হয়ে থাকতে চায়, তবে দুনিয়ার যে কোনো স্থানে সে নামায পড়তে পারবে; তার উপর কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যদি কেউ হিন্দু হয়ে থাকতে চায়, তাহলে তারও যে কোনো জায়গায় স্বীয় মূর্তিসমূহের পূজা করার অনুমতি থাকবে। যদি কেউ ইহুদি বা খ্রিষ্টান হয়ে থাকতে চায়, তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এমনকি যদি কোন মুসলমান মুরতাদ হয়ে যায়, স্বীয় দ্বীনই ছেড়ে দেয়, তাহলেও তাকে নিজের তা করার অনুমতি দেওয়া হবে; অন্য কারো তার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার থাকবে না।

এমনিক যদি কেউ নাস্তিক যিন্দীক হয়েও জীবন কাটাতে চায় তাহলে এই নব্য জাহিলিয়্যাত তথা গণতন্ত্রের নিকট এটারও এমন সম্মানজনক প্রচার হবে, যেমনটা একজন আল্লাহর ওলীর হয় । গণতন্ত্র; চাই প্রাচ্যের হোক অথবা পাশ্চাত্যের হোক, তা এই যিন্দীককে হেফাজত করা নিজের দায়িত্ব মনে করবে। এভাবে ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট দ্বীন পালনের সবারই স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার দ্বীন, যা সম্মিলিত জীবনের সাথে সম্পর্ক রাখে, যার মধ্যে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার ব্যাপারগুলো থাকে। যার মধ্যে অর্থনৈতিক ও ফৌজদারী ব্যাপারগুলো থাকে, ঐ দ্বীনের ব্যাপারে কারো স্বাধীনতা থাকবে না। বরং রাষ্ট্রীয় ফরমানের বলে প্রত্যেককে সেই দ্বীনই মানতে বাধ্য করা হবে, যেই দ্বীন কাফের জাতিসংঘ সেই রাষ্ট্রের জন্য কার্যকর করবে। সম্মিলিত কাজ-কর্মে কেউ যদি নিজের দ্বীনের উপর আমল করার কথা বলে, নিজের লেনদেন কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালনা করার কথা বলে, যদি এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় ফরমানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় দেবীর (সংবিধানের) বিদ্রোহী (জঙ্গি) মনে করা হবে। তার সাথে যুদ্ধ করা হবে যতক্ষণ না সে রাষ্ট্রীয় ধর্মের ভেতর প্রবেশ করে, অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে।

এমতাবস্থায় নিজের পুরো দ্বীনকে বাস্তবায়নের দাবি করা ও তা কার্যকর করার জন্য যুদ্ধ করা এমন হবে, যেমন জ্বলন্ত অঙ্গার হস্তে ধারণ করা। সে সময় স্বীয় দ্বীনের অবিচল ও অটল ব্যক্তি হবে জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে ধারণকারীর ন্যায়। যখন ঘর থেকে মায়েদের প্রিয় সন্তানদেরকে গুম করে ফেলা হবে, যখন যুবতী বোনদের লাশ রাস্তাগুলোতে এমনভাবে ছুঁড়ে ফেলা হবে, যেন তাদের কোন নাগরিক অধিকার কখনোই ছিল না। দেহগুলোর মাঝে (ড্রিল দ্বারা কৃত) ছিদ্র, ইস্ত্রি দ্বারা দগ্ধ শরীর, ভীষণ অত্যাচারে ভগ্ন-চোয়াল এবং নিষ্পেষিত হাড্ডি। শুধু এই অপরাধে যে, এই লোকগুলো মুহাম্মাদ সা.-এর আনীত শরীয়ত ব্যতিত অন্য কোন দ্বীন মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দিয়েছিল। তাদের অপরাধ শুধু এই ছিল যে, তারা এই যুগেও মুহাম্মাদ সা.-এর পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাবি করতো।

হে উম্মাতের মায়েরা! যাদের কলিজার টুকরাকে প্রিয় নবীজি সা.-এর শরীয়তের ভালোবাসার অপরাধে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে!

হে আমার বোনেরা! যাদের প্রিয় স্বামীকে এই জালিম শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে। নানা প্রকার ভীষণ অত্যাচারের পর শহীদ করে দেয়া হয়েছে অথবা টর্চার সেলের সীমাহীন ভুতূড়ে অন্ধকারে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে! এসব কিছুর উপর ধৈর্যধারণ করার বিনিময়ে তোমাদের প্রিয় নবী সা. কী উত্তম সুসংবাদই না শুনিয়েছেন!

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لِتَمَسكِ فِيهِنَّ يَوْمَئِذٍ بِمَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا يَعْلَمُوْنَ مِثْلَ اَعْمَالِكُمْ.

“সেদিন যে ঐ দ্বীনকে ধারণ করবে এবং তার উপর অবিচল থাকবে, যে দ্বীনের উপর তোমরা আছো। সে এমন পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব পাবে, যারা তোমাদের আমলের ন্যায় আমল করে।”

সেদিন যে ঐ দ্বীনকে ধারণ করবে এবং তার উপর অবিচল থাকবে, যে দ্বীনের উপর তোমরা আছো। সে এমন পঞ্চাশজন লোকের সামনে সমান সওয়াব পাবে, যারা তোমাদের আমলের ন্যায় আমল করে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব, নাকি তাদের পঞ্চাশজন লোকেরা সমান সওয়াব? রহমাতুল্লিল আলামীন জবাব দিলেন, بل اجر خمسين منكم বরং তোমাদের পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব পাবে। এই হাদীসের শব্দগুলোর মাঝে চিন্তা করুন, সেই লোকেরা কোন দ্বীনের উপর অবিচল থাকবে?

প্রিয় সা. বললেন- “তোমরা যে দ্বীনের উপর আছো”; অর্থাৎ আমার সাহাবাগণ যে দ্বীনের উপর আছে, ঐ লোকগণ সেই দ্বীনের উপর থাকবে। তারা আমেরিকা কর্তৃক অনুমোদিত দ্বীন মানবে না, তারা ইসলামের মনচাহি চিন্তার ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করবে না। মডারেট দ্বীনের সামনে ঝুঁকে যাবে না, সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলবে না এবং افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো আর কিছু অংশের প্রতি অবিশ্বাস করো।” [সুরা বাকারা- ৮৫] এর মত হবে না। যে দ্বীনের উপর রাসুল সা.-এর সাহাবাগণ ছিলেন, এই শরীয়তের পৃষ্ঠপোষকগণ সেই দ্বীনের উপর থাকবে ।

আপনি কি জানেন, সাহাবায়ে কেরাম কোন দ্বীনের উপর ছিলেন?

সেই দ্বীন, যে দ্বীন দিয়ে মুহাম্মাদে আরবী সা.-কে প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে ব্যক্তিগত জীবনেও আল্লাহকে উপাস্য মানা হয় এবং সামাজিক জীবনেও। যা মসজিদ-মাদ্রাসায়ও কার্যকর হওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাজার ও রাষ্ট্রীয় ভবনসমূহেও। যা মুসলিম দেশসমূহেওকার্যকর করা ফরজ এবং অমুসলিম দেশসমূহেও। ব্যস, এই বিনিময় ঐ সমস্ত লোকদের জন্য, যারা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে নিয়ে ধৈর্যধারণ করে থাকবে।

এভাবেই হয়ত তার হাতের চর্বিগুলো গলে গলে অঙ্গারকে ঠাণ্ডা করে দিবে অথবা ঐ দেহটিই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, যা জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণ করেছিল। এই অবস্থা শুধু আপনাদের উপর দিয়েই আসেনি; বরং আপনাদের পূর্ববর্তীরাও এমন অবস্থা কাটিয়ে গেছেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় কিতাবে বলেছেন-

أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ

“মানুষ কি মনে করে, আমরা ঈমান এনেছি বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?” [সুরা আনকাবুত- ২]

এই লোকেরা কি একথা বুঝে বসে আছে যে, তারা নিজেদেরকে মুসলমান বলবে, আর তাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? না, বরং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে; আর এই পরীক্ষা কেমন হবে?

ইমাম ইবনে জারীর রহ. বলেন- এটা হচ্ছে আপনাকে আপনার দুশমনদের দ্বারা অর্থাৎ আল্লাহ, তাঁর রাসুল এবং তাঁর শরীয়তের শত্রুদের দ্বারা পরীক্ষা করা হবে । যেমন বনী ইসরাঈলকে ফেরাউন ও তার সাংসদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এবং ঈসার হাওয়ারীদেরকে তাদের দুশমনদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল।

এই আয়াতের পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে-

وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছি, তাই আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন কারা মিথ্যাবাদি।” [সুরা আনকাবুত- ৩]

অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষায় ফেলেছি; এই পরীক্ষা করা আল্লাহর রীতি। অতএব আল্লাহ অবশ্যই সত্যবাদীদেরকেও প্ৰকাশ করে দিবেন । এবং অবশ্যই মিথ্যাবাদীদেরকেও প্রকাশ করে দিবেন। এই আয়াতে গুরুত্বারোপের পদ্ধতিগুলোর দিকে দেখুন, কত ভাবে গুরুত্বারোপ করে বিশ্বজগতের বাদশা ঘোষণা করছেন।

সুরা আল ইমরানে আল্লাহ তায়ালা জিহাদের পথে বিবিধ কষ্টের উপর ধৈর্যধারণকারীদের প্রশংসায় বলেন-

وَكَأَين مِّن نَّبِيِّ قَاتَلَ مَعَهُ رِيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا وَاللهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ.

“আর বহু নবী ছিলেন, যাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদের অনুবর্তী হয়ে জিহাদ করেছে আল্লাহর পথে। তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।” [সুরা আল ইমরান- ১৪৬]

আর কত নবী ছিল, যার সাথে থেকে অনেক আল্লাহওয়ালা লড়াই করেছে; তবে আল্লাহর পথে তাদের উপর যা আপতিত হয়েছে। অর্থাৎ অনেক নবী অতিবাহিত হয়েছেন, যাদেরকে স্বীয় দলের অন্যান্য অনেকের সাথে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের পরবর্তীগণ আল্লাহর পথে যে বিপদাপদের স্বীকার হয়েছেন তাতে না হীনমন্য হয়েছেন, না দুর্বল হয়েছেন। না তারা জিহাদের সাহায্য ছেড়ে দিয়েছেন এবং না দুশমনদের সামনে মাথা ঝুঁকিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ধৈর্য অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।

আল্লাহ তায়ালা অন্য জায়গায় বলেছেন-

ان الذين  قالوا ربنا الله ثم استقاموا

 অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা বলে, আল্লাহই আমাদের রব। অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় (এবং বলে) ।

আপনি এই আয়াতে ভালবাসায় ভরা উক্তিটির নমুনা দেখুন। ربنا الله“আমাদের রব আল্লাহ” । আল্লাহকে রব মানার পর যেন তার সমস্ত অনুগ্রহরাজীর স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর সে বলল, আমাদের প্রভু আল্লাহ ৷

অর্থাৎ যিনি আমাদেরকে খাওয়ান, পান করান, যিনি আমাদেরকে প্রতিপালন করেন। তারপরও তার দুশমনদেরকে ভয় পেয়ে অন্য উপাস্যকে মেনে নেওয়া। তার উপাসনায় ও ইবাদতে তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করা, তার প্রিয় বন্ধুর আনীত শরীয়ত ব্যতীত অন্য কোন শরীয়তকে ঐ দেশে কার্যকর হতে দেওয়া ।

এটা আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসুলের সাথে কেমন বিশ্বস্ততা? কেমন ভালবাসা যে, তার ভালবাসার উপর দেশের ভালবাসা প্রাধান্য পেয়ে যাবে?! তার ভয়ের উপর বান্দার ভয় প্রাধান্য পেয়ে যাবে, তাই বলতে থাকবে, হিন্দুস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কথা বলবে, তাহলে আমাদের মেরেই ফেলা হবে?

ان الذين  قالوا ربنا الله

“যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ” । তিনি ঘরের মধ্যেও আছেন, বাহিরেও আছেন, তিনি মসজিদেও আছেন, আদালতেও আছে। তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই বিধানদাতা। তার শাসকর্তৃত্বে এবং আইন প্রণয়নে তিনি ব্যতীত অন্য কোন অংশীদার নেই। ثم استقاموا অতঃপর তারা এই কালিমা পড়ে তার উপর অবিচল থাকে, এই কালিমার ব্যাপারে কোন সমঝোতা বা সন্ধি করে না। এরপর কী হয়?

কাফেররা তাকে রকমারি পুরষ্কারে পুরষ্কৃত করে? তাকে নিরাপদ নাগরিক ও সম্মানিত নাগরিক হিসাবে উপাধি দেয়? না!!!

واوذوا في سبيل

তাকে আমার কালিমার পথে কঠিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়।

مستهم الباساء والضراء

তাকে আমার পথে কঠিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়।

তাদের শরীরকে উত্তপ্ত বালুতে ঝলসানো হয়, তাদের শরীরকে বর্ষা দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তাদের মাথার উপর কড়াত রেখে মাঝখান দিয়ে ফাড়া হয়, জ্বলন্ত কড়াইয়ে ভুনা করা হয়। তাদেরকে লোহার পোশাকে পেকেট করে দিল্লীর প্রজ্জ্বলিত আগুনের ধোঁয়ার মধ্যে গাছে উপর লটকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের অবস্থা এই যে, তাদের যবানে احد احد ই জারি থাকে।

আল্লাহর শাসন কর্তৃত্বের মাঝে আল্লাহর আইন প্রণয়নের ক্ষমতার মাঝে কোন ইংরেজী কোন ইহুদি অথবা কোন পাশ্চাত্যবাদীর গড়া গণতন্ত্রকে শরীক করতে রাজী হয় না ।

ثمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ

এটাই তাদের বৈশিষ্ট্য।

সুতরাং হে ঐ সকল বন্ধুগণ! যারা মুজাহিদদেরকে ভালবাসেন। আজ আপনাদের ঐ প্রিয় ভাইদের সাথে দুনিয়াতে যা কিছু করা হচ্ছে, এগুলো কোন নতুন বিষয় নয়। শরীয়তের দুশমনদের নমুনাও বদলায়নি। শরীয়তের পৃষ্ঠপোষকদের নমুনাও বদলায়নি। উভয় শ্রেণীই আপন আপন পূর্বসূরীদের পথে চলছে। কিন্তু পরিশেষে সফলতা কার আসে, আর লাঞ্ছনা কার মুখের কুলুপ হয়? এটা বোঝার জন্য কোন দর্শন বোঝার প্রয়োজন নেই;

ইতিহাসই চিৎকার করে বলছে- ‘প্রকাশ্য সফলতা’ কার মাথার মুকুট হয়ে আসে। যার ফলে জানাযা উঠার সময়ই পুরো পরিবেশে গুরুগম্ভীর ভাব বিরাজ করে। আর ঐ শাসকদের হাশরের চিত্রও দুনিয়াবাসী দুনিয়াতেই দেখে ফেলেছে ।

فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْاَرْضُ وَمَا كَانُوا مُنْظَرِيْن.

“না জমীন তাদের তরে কেঁদেছে, না আসমান তাদের জন্য অশ্রু বর্ষণ করেছে।” [সুরা দুখান- ২৯]

সুতরাং হে মুহাম্মাদ সা-এর দ্বীনের বিশ্বাসীগণ! ব্যস, সামান্য ধৈর্য ধারণ করুন। সামান্য ধৈর্য! ঐ মায়ের ধৈর্য দেখুন, তার দ্বীনের প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহর একটি হুকুমের জন্য অনমনীয় হয়ে যাওয়ার অবস্থা দেখুন।

ইবনে আবিদ দুনিয়া এই ঘটনাটি তার “আসস ওয়াসসাওয়াব আলাইহি” নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন- ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ বলেন, “পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যে একজন নারী ছিল, যার নাম ছিল ‘সারাহ’। তার সাতজন ছেলে ছিল। ঐ দেশের বাদশা লোকদেরকে শুকর খেতে বাধ্য করতো। তাই এই মহিলাকেও তার সাত ছেলেসহ বাদশাহর সামনে আনা হলো। বাদশা তার সবচেয়ে বড় ছেলের সামনে শুকরের গোশত রেখে বলল, এগুলো খাও । সে বলল, আল্লাহ যা আমার উপর হারাম করেছেন তা আমি কিভাবে খেতে পারি? বাদশা জল্লাদকে আদেশ করলো, জল্লাদ তার হাত পা কেটে একেকটি অঙ্গকে আলাদা করে ফেলল। এভাবে ছেলেটি শহীদ হয়ে গেলো ।

মা নিজের সামনে এসব কিছু দেখছিলেন।তারপর তার ছোট ভাইয়ের সামনে শুকরের গোশত রাখা হলো। বাদশা বলল, এগুলো খেয়ে নাও। সে জবাব দিল, যা আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন সেটা আমি কি করে খেতে পারি?

বাদশা তামার বড় পাতিল আনার আদেশ করল। তারপর তাতে তেল ঢেলে ফুটানোর জন্য আগুনে দেওয়া হলো। যখন তেল ফুটে টগবগ করতে লাগলো, তখন ঐ যুবককে তার মধ্যে ছুঁড়ে মারা হলো। মা এ দৃশ্য ধৈর্যের সাথে দেখছিলেন।

তারপর তার ছোট ভাইকে ডাকা হলো, তার সামনে শুকরের গোশত রেখে তাকে খেতে আদেশ করা হলো, ঐ ছেলে বলল, আমার হারাম খাওয়ার তুলনায় আল্লাহর নিকট তুমি অনেক বেশি তুচ্ছ ও দুর্বল। বাদশাহ এটা শুনে হেসে দরবারিদেরকে সম্বোধন করে বলল, “তোমরা জান, সে কেন আমাকে গালমন্দ করলো? আমরা রাগ উঠিয়ে দেওয়া, যাতে আমি তাকে তাড়াতাড়ি মেরে ফেলি। কিন্তু সে ভুল করেছে।'

এরপর বাদশা ঐ ছেলের গায়ের চামড়া উঠানোর আদেশ করলো, তারপর তার চেহারা ও মাথার গোশত উঠানোর আদেশ করলো। এভাবে পুরো দেহের চামড়া উঠিয়ে ছেলেটিকে শহীদ করে দেওয়া হলো ৷

আল্লাহর একটি হুকুমের জন্য জীবন উৎসর্গ করার দৃশ্য এই মহান মা শান্তভাবে দেখছিলেন। এভাবে এই মহিলার বাকি সন্তানদেরকেও বিভিন্ন প্রকার কষ্ট দিয়ে শহীদ করে দেওয়া হয়। সবশেষে এই মহিলার সাথে তার সবচেয়ে ছোট ছেলেটি ছিল, যে তার অনেক আদরের ছিল। বাদশাহ এই ছোট ছেলে এবং মায়ের দিকে ফিরলো, মাকে বলল, ‘এই বাচ্চাকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়ে শুধু শুকরের গোশতের এক লোকমা খাইয়ে দাও ।'

মা বলল, ‘ঠিক আছে', সে তার বাচ্চাকে সেখানেই এক কোণে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘বৎস! তোমার অন্যান্য ভাইদের উপর আমার একটি হক ছিল, আর তোমার উপর আমার দুটি হক'। কারণ আমি অন্যান্য ভাইদেরকে দুই বৎসর দুধ পান করিয়েছি। কিন্তু তুমি যখন গর্ভে ছিলে তখন তোমার পিতা মারা যান। এরপর যখন তুমি জন্মগ্রহণ করলে তখন তুমি দুর্বল হওয়ার কারণে এবং তোমার প্রতি আমার অধিক ভালবাসার কারণে তোমাকে চার বৎসর দুধ পান করিয়েছি। এ কারণে তোমার উপর আমার দুটি হক। তাই আমি তোমাকে আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি, তুমি ঐ শুকরের সামান্য গোশতও খেয়ো না এবং কিয়ামতের দিন আমার সাথে ও তোমার ভাইদের সাথে এ অবস্থায় উঠো না যে, তুমি তাদের সাথে নেই। অর্থাৎ তুমি দুনিয়ার জন্য এই হারাম খেয়ো না, বরং তোমার ভাইদের মত শাহাদাতের সুধা পান করে নিবে।'

ঐ সন্তান বলল, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আমি এত সুন্দর কথা আপনার থেকে শুনলাম, আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম, না আবার আপনি আমাকে এই হারাম খাওয়ার কথা বলেন।' তারপর মা এই ছেলেকে নিয়ে বাদশার সামনে এসে বলল, ‘নাও সে এসে গেছে। আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, খুব ভাল করে প্রস্তুত করে দিয়েছি।'

তাই বাদশাহ ঐ বালককে হারাম খেতে আদেশ করলো। তখন এই বালকও এ জবাবই দিল, যা তার ভাইয়েরা দিয়েছি। ফলে বাদশাহ তাকেও মায়ের সামনে হত্যা করে ফেলল । এরপর মাকে বলল, “আমি তোমার উপর দয়া করবো। কারণ তুমি আজ নিজ চোখের সামনে অনেক কিছু দেখছো । যাও এক লোকমা খেয়ে নাও, তারপর যা ইচ্ছা করো। তারপর তুমি যাই চাইবে তোমাকে তাই দিব। আরামে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে।'

এটা আসলে ফেরাউনদের পুরাতন বৈশিষ্ট্যই, তারা যখন শক্তি ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়, তখন লোভ দেখাতে শুরু করে, যাতে তাদের নিজেদের গড়া ধর্মকে লোকদের সামনে সত্য প্রমাণ করা যায় ৷

ঐ মহান মা জবাব দিল, 'আমি সন্তানদের থেকেও বঞ্চিত হবো, এর সাথে আল্লাহর নাফরমানিও জমা করবো? অর্থাৎ সন্তানদের থেকে তো বঞ্চিত হয়েছিই, এখন তারপর বেঁচে থেকে কি করবো? আমি ঐ জিনিস খেতে পারবো না, যেটা আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন।' তাই এইজালিম বাদশা তাকে শহীদ করে দিল। আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি রহম করুন।

তাই হে আমার মুজাহিদ ভাই ও বোনগণ! হে ঐ সকল বন্ধুগণ, যারা মুজাহিদদেরকে ভালবাসেন এবং যারা জিহাদে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন। আজ আপনাদেরকে শুধু একটি হারাম খেতে বাধ্য করা হচ্ছে না, বরং অসংখ্য হারামকে হালাল বলে বিশ্বাস করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। এই কুফরী গণতন্ত্রের সামনে মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করা হালাল অর্থাৎ আইনানুগ বানায়, যা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আল্লাহ থেকে নিয়ে পার্লামেন্টকে দেয়, যা আল্লাহর আইন দ্বারা শাসন করার পরিবর্তে ইংরেজদের আইন দ্বারা শাসন করাকে আবশ্যক বলে স্বীকৃতি দেয়। যা আল্লাহর ‘বিধান দেওয়ার' গুণের সাথে সৃষ্টিকে শরীক করে; বরং এই গুণটি পরিপূর্ণভাবে মানুষের হাতে ন্যস্ত করে দেয়। তাই এক আল্লাহকে বিশ্বাসীগণ, তাওহীদের কালিমা মুখে উচ্চারণকারীগণ এবং নিজেদের নবীর প্রতি ঈমান আনয়নকারীগণ! এবং নিজেদের নবীর প্রতি ঈমান আনয়নকারীগণ কি আজকে ফেরাউনদের ধমকির কারণে নিজেদের প্রকৃত উপাস্যের সাথে প্রকাশ্য শিরককে বরদাশত করবেন?

শুধু এই জন্য যে, যিন্দেগীর শ্বাসটুকু বাকি থাকবে আর সিনা থেকে ঈমান বের হয়ে যাবে? না, কখনো না !!

এই কয়েকদিনের যিন্দেগীর জন্য স্থায়ী যিন্দেগী ধ্বংস করা যায় না। আল্লাহর দুশমনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যায় না!

আল্লাহ তায়ালা এই পেরেশানীসমূহের উপর ধৈর্য ধারণ করার জন্য ঈমানদারদের সাথে অসংখ্য পুরষ্কারের ওয়াদা করেছেন । আল্লাহ বলেন-

فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأَخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُودُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَا كَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِندِ الله وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ

“যারা আমার রাস্তায় হিজরত করেছে এবং তাদেরকে নিজেদের ঘর- বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার রাস্তায় তাদেরকে বিভিন্ন কষ্ট দেওয়া হয়েছে। তারা আল্লাহর শরীয়তের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং তাদেরকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। আমি অবশ্যই তাদের গুণাহসমূহ মুছে দেব। এবং অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করবো, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরষ্কারস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।” [আল ইমরান- ১৯৫]

جزاء بما كانو يعلمون

 “এটা তাদের (নেক) আমলের প্রতিদানস্বরূপ”।

আর আল্লাহর জান্নাত কেমন! হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি দুনিয়াতে কখনো আনন্দের মুখ দেখেনি, সর্বদাই চিন্তা-পেরেশানী ও বিপদাপদের মধ্যে থেকেছে। কিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতে একটি ডুব দেওয়ানো হবে, তারপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কখনো কোনো পেরেশানী দেখেছো? আবার এরকম একজন লোককেও আনা হবে, যে দুনিয়াতে কখনো কোন পেরেশানীই দেখেনি, সর্বদা সুখে-স্বাচ্ছন্দে কাটিয়েছে। তাকে জাহান্নামে একটি ডুব দেওয়ানো হবে, তারপর জিজ্ঞাসা করা হবে, কখনো কোন আনন্দ দেখেছো? সে বলবে, দুনিয়াতে কখনো কোন আনন্দই দেখিনি।

এটা এমন জান্নাত! توابا من عند الله والله আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ ।

হযরত আলী রা. বলেছেন-

الا ان الصبر من الايمان بمنزلة الرأس من الجسد

“লোকসকল! স্মরণ রাখ, ঈমানের মাঝে সবরের মর্যাদা হলো দেহের মধ্যে মাথার মতো।”

যখন মাথা কেটে ফেলা হয়, তখন দেহ শেষ হয়ে যায়। তাই শোন! যার সবর নেই তার ঈমান নেই। আল্লাহ সবরের অনেক ফজীলত রেখেছেন। নিজের পথে আগত কষ্টসমূহের উপর ধৈর্যধারণ করার বিনিময়ে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য এমন ওয়াদা করেছেন:

إِنَّمَا يُوَفِّى الصَّابِرُونَ أَجْرَهُم بِغَيْرِ حِسَابٍ

“নিশ্চয়ই ধৈর্যধারণকারীদেরকে তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে হিসাব ছাড়া।” [সুরা যুমার- ১০]

অর্থাৎ তাদের প্রতিদান মেপে দেওয়া হবে না, বরং বেহিসাব দেওয়া হবে।

দাওয়াতী ময়দানে কর্মপরিচালনাকারী আমার ভাই ও বোনেরা! পূর্বে তো মনে হতো, যুদ্ধের ময়দানেই শুধু শাহাদাত লাভ করা যায়। কিন্তু এখন আল্লাহর দায়ীদের জন্য দাওয়াতের ময়দানেই শাহাদাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন দাওয়াতের ময়দানেও শাহাদাতের পুরষ্কার বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দৃঢ় বিশ্বাস রাখে, তার অবশ্যই সেজেগুজেই দাওয়াতের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হবে। কারণ শাসকদের সামনে হক কথা বলাকেই শাহাদাতের মাধ্যম বানানো হচ্ছে।

مَن كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ اللهِ فَإِنَّ أَجَلَ اللهِ لَاتِ

“যে ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন তার প্রস্তুতি নেয়, কারণ) আল্লাহর (স্থীরকৃত) মৃত্যু অবশ্যই আসবে।”[সুরা আনকাবুত- ৫]

এই নির্ধারিত সময় তো আসবেই। যেকোন অবস্থাতেই তা আসবে। তাই যদি আমাদের রব এটাকে দাওয়াতের ময়দানেই কবুল করতে চান তবে আপত্তি কিসে?

আগ-পিছ ভাবা কিসে? জানের সওদা করে ফেলার পর তাকে সোপর্দ করে দিতে গড়িমসি কিসে? তোমার সাথীরা যুদ্ধের ময়দানে মাথা হাতের তালুতে রেখে হকে পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই তুমি এখন দাওয়াতের ময়দানে মাথায় কাফন বেধে নাও। শাহাদাতের লায়লাকে সেখানেই খুঁজতে থাকো। একত্র তো ইনশাআল্লাহ এক জায়গায়ই হতে হবে।

যারা মহান উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, তাদেরকে তো উদ্দেশ্যের জন্য বিভিন্ন কুরবানী দিতেই হয়। বিপ্লবের আওয়াজ উত্তোলনকারী দলের গলায় তো হার পরিধান করানো হয় না; বরং এই পাগলদের জন্য তো ফাঁসির রশি এবং হত্যার নতুন নতুন রূপ আবিষ্কার করা হয়। তপ্ত মরুকে খেজুর বাগান বানানোর আশায় যদি কিছু কাঁটা বিধে যায়, তবে চিন্তিত হওয়া উচিত নয়। যদি আমাদের রক্ত ও অশ্রু সাঁতরে উম্মতের কিশতী গন্তব্যপানে পৌঁছে যায়, তবে আমরা ব্যর্থ নই ৷

যদি বহুজাতিক জোটের ভূ-সীমানায় বিভক্ত উম্মতকে কালিমার গ্রন্থিতে একীভূত করার জন্য আমাদের নিজের লাশের পুল বানাতে হয়, তাহলে কদমে স্খলন সৃষ্টি না হওয়া চাই। যদি বরফে কম্পমান উম্মতকে উষ্ণতা দেওয়ার জন্য আমাদের দেহকে জ্বালাতে হয়, তবে এটা আমাদের স্থায়ী প্রশান্তির কারণ হবে। এ সবকিছু অনর্থক যাবে না। ইনশাআল্লাহ। তারপর এই কুরবানীসমূহের বিনিময়ে এমন একটি সময় আসবে, যখন সত্য বিজয়ী হবে, বাতিল শেষ হয়ে যাবে। তারপর লোকজন দলে দলে ঐ দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করে নিবে। যার জন্য এই জামাত উঠেছিল। এবং রক্তসাগর পাড়ি দিয়েছিল। আপনি একটু চিন্তা করুন, মুহাম্মাদ সা.-এর আনীত জীবন ব্যবস্থা না থাকার কারণে শুধু মানুষ নয়, বরং পুরো মানবতা আজ কেমন দুঃসহ জীবনযাপন করছে?

আল্লাহ স্বীয় দ্বীনের মর্যাদা উঁচু করার জন্য আপনাদেরকে নির্বাচন করেছেন, তার সাহায্যের জন্য আপনাদেরকে মনোনীত করেছেন। যদি তার পথে জান কুরবান করতে হয়, সম্পদ বিসর্জন দিতে হয়। আশঙ্কার সম্মুখীন হতে হয় যখন আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের বড় প্রয়োজন। যখন আজ শরীয়তের দুশমনেরা দুনিয়াতে আন্তর্জাতিক আইন, তথা আন্তর্জাতিক ইবলীসি শাসনব্যবস্থাই চালু রাখতে চায়, ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী যুদ্ধ চালিয়ে যায়। তখন যদি কেউ মুহাম্মাদ সা-এর দ্বীনকে সাহায্য করে, তার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে, তার পথে আগত প্রতিকূল অবস্থা সমূহের মোকাবিলা করে। এবং সত্যের পথে অবিচল থাকে, তাহলে এরকম লোকদের জন্য আল্লাহ বড় মর্যাদা রেখেছেন। এরকম সময় উপবিষ্ট লোকেরা আর আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদদেরকে সাহায্যকারীগণ সমান হতে পারে না। এরকম সময় আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নের জন্য অর্থব্যয়কারীগণ আর সম্পদ সঞ্চয়কারীগণ সমান হতে পারে না ৷

আল্লাহ সুব. সুরা হাদীদে ১০নং আয়াতে বলেছেন-

وَمَا لَكُمْ أَلَّا تُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلِلَّهِ مِيرَاتُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ

“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করছো না? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার তো আল্লাহরই?”

হে মুহাম্মাদ সা.-এর শরীয়তের উপর ঈমান আনয়নকারীগণ! তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করছো না, আসমান এবং যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই। এ সবকিছুই তার ।

لَا يَسْتَوِي مِنكُم مِّنْ أَنفَقَ مِن قَبْلِ الْفَتْحِ وَقَاتَلَ

“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়।”

যে বিজয়ের পূর্বে খরচ করেছে এবং জিহাদ করেছে, তার সমান ঐ লোকেরা হতে পারে না, যারা বিজয়ের পরে খরচ করেছে এবং জিহাদ করেছে।

أُولَئِكَ أَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الذِينَ أَنفَقُوا مِن بَعْدُ وَقَاتَلُوا وَكُلًّا وَعَدَ اللهُ الْحُسْنَى وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

“এই সকল লোকেরা ঐ সমস্ত লোকদের তুলনায় মর্যাদায় উর্ধ্বে, যারা পরবর্তীতে সম্পদ খরচ করেছে এবং যুদ্ধ করেছে।” [সুরা হাদীদ- ১০]

বরং মর্যাদা বিবেচনায় এ সক লোকেরা উত্তম, এ সমস্ত লোকদের তুলনায়, যারা বিজয়ের পরে খরচ করেছে এবং যুদ্ধ করেছে। কারণ বিজয়ের পূর্বে বিপদাপদ থাকে বেশি। এই সময় আল্লাহর প্রতিশ্রুতিসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা বাহ্যিক পরিস্থিতির বিপরীত মনে হয়। দুর্বল ঈমানের অধিকারীরা কুফরের শক্তি দেখে এই কুমন্ত্রণার স্বীকার হয় যে, তাদের মোকাবিলায় মুসলমানগণ কিভাবে বিজয়ী হবে?

সুতরাং এই সময় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের প্রতিশ্রুতিসমূহের উপর দৃঢ় ঈমান রেখে যারা নিজেদের মাল এই রাস্তায় খরচ করে নিজেদের জান এই রাস্তায় উৎসর্গ করে মর্যাদা হিসাবে তারাই উত্তম ।

এজন্য এ সময় যারা মুজাহিদদেরকে সাহায্য করবে, যারা এই সময় মুজাহিদদেরকে আশ্রয় দিবে। যারা এই সময় নিজের সন্তানদেরকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবান হওয়ার জন্য পেশ করে। যখন মুজাহিদদের সাহায্যকারীদেরকে ভয় দেখানো হচ্ছে, যারা জিহাদকে ভালবাসে তাদেরকে ঘরের মধ্যে গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে। ঘর থেকে উঠিয়ে শহীদ করে রাস্তায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এই সময় আল্লাহ নিজের দ্বীনের সাহায্যকারীদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।

হে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সন্তানগণ! চক্ষু খোল এবং ক্ষীণ অনুভূতি থেকে বেরিয়ে এসো, মিডিয়ার মিষ্টিকথার প্রতি কর্ণপাত করো না ! পরাজয়, পরাজয়ই হয়।

যুগের ফেরাউন আমেরিকা নিকৃষ্টভাবে পরাজিত হয়েছে। এই পরাজয়কে “মিশন কমপ্লিট” বা যে সুন্দর নামই দিক না কেন; মূলতঃ এটা লাঞ্ছনাকর পরাজয়। আল্লাহ স্বীয় শরীয়তের জন্য যুদ্ধকারীদেরকে বিজয় উপহার দিয়েছেন। ঈমানদারদের জন্য এতে বড় উপদেশমালা রয়েছে।

এজন্য শাসকশ্রেণীর জিহাদের বিরুদ্ধে বলা যেন আপনাকে পেরেশান না করে। ব্যস, একটু ধৈর্য ধারণ করুন!

পরীক্ষার সময় আল্লাহর দ্বীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে থাকুন। এতসময় জিহাদে ব্যয় করার পর, জিহাদী কাফেলার সাথে চলার পর। যখন সফর আরো দৃঢ়তা চায়, আর গন্তব্যের সামান্য পথ বাকি আছে । এমন সময় কোন বুদ্ধিমান মুসাফির দুর্বলতা বা অলসতা দেখায় না, বরং গন্তব্যে পৌঁছার জন্য প্রস্তুতি আরো গতিশীল করে। তাই সামান্য সাহস জমিয়ে রাখুন এবং স্বীয় প্রতিপালকের সামনে সেজদায় পড়ে যান। তিনি অসহায়দেরকে আশ্রয়দানকারী এবং দুর্বলদেরকে সাহায্যকারী। নিজেকে হেফাজত করুন, খারিজীদের ফেতনা থেকে এবং ইন্টারনেটের ফেতনা থেকেও।

মুক্ত কাফেলা فَمِنْهُم مَّن قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ  এই কাফেলার স্থিরতা কোথায়?

আল্লাহ সর্বাবস্থায় আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন এবং আন্তর্জাতিক জিহাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল ষড়যন্ত্র থেকে মুজাহিদদেরকে এবং জিহাদকে যারা ভালবাসে তাদেরকে রক্ষা করুন।

 

 

 

 

 

 

এক মহাসাগরের ঝড়ের অপেক্ষায়!

 

 

الحمد الله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين،  وعلى آله وصحبه

أعوذ بالله من الشيطان الرجيم بسم الله الرحمن الرحيم أجمعين ، اما بعد 

وقال سبحانه وتعالي :

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

 

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য সালাত ও সালাম সর্বশেষ রাসুল সা. এর উপর বর্ষিত হোক। প্রথমেই আমি অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় ও অশেষ মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি। আল্লাহ সুব. বলেন-

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ

“তিনিই হচ্ছেন সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর রাসুলকে (যথার্থ) পথনির্দেশ ও সঠিক জীবন বিধান দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে করে আল্লাহর রাসুল (দুনিয়ার) অন্য সব বিধানের উপর একে বিজয়ী করতে পারেন, (সত্যের পক্ষে) সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।” [সুরা ফাতহ- ২৮]

 

আল্লাহ সুব. বলেন-         

وقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلَّهُ لِلّهِ فَإن انتَهَوْا فَإِنَّ اللهَ بما يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

 

“হে ঈমানদারগণ) তোমরা কাফিরদের বিরদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না (আল্লাহর যমীনে কুফরির) ফিতনা বাকী থাকবে এবং দ্বীন সম্পূর্ণভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যই (নির্দিষ্ট) হয়ে যাবে, (হা) তারা যদি (কুফর থেকে) নিবৃত্ত হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালাই হবেন তাদের কার্যকলাপের পর্যবেক্ষণকারী”। [সুরা আনফাল- ৩৯]

আল্লাহ সুব. বলেন-

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

“(আসলে) আল্লাহ তায়ালা যদি (যুগে যুগে) একদল লোককে দিয়ে আরেক দল লোককে শায়েস্তা না করতেন, তাহলে এই ভুখণ্ড ফিতনা ফাসাদে ভরে যেতো, (কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তা চাননি, কেননা) আল্লাহ তায়ালা এ সৃষ্টিকুলের প্রতি বড়োই অনুগ্রহশীল। [সুরা আল বাকারা- ২৫১]

আল্লাহর নবী সা. বলেন-

“আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের দুই দলকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন; সেই দল যারা আল হিন্দ (উপমহাদেশ) আক্রমণ করবে এবং সেই দল যারা মারিয়াম আ. এর পুত্র ঈসা আ. এর সঙ্গে থাকবে।”

আবু হুরাইরা রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর নবী সা. বলেছেন- “আল্লাহর রাসুল সা. আমাদেরকে হিন্দ (উপমহাদেশ) বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি আমি এতে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হই, তাহলে আমার মাল ও জানের দুটোই এতে ব্যয় করবো। যদি আমি নিহত হই, আমি সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদদের অন্যতম হবো। আর যদি আমি ফিরে আসি, আমি হবো আবু হুরাইরা- যে কিনা মুক্ত (জাহান্নাম থেকে)।”

বাজপাখি গেছে উড়ে বন্দীদশা হতে, পাখীদের বলে

কারাগারের ডাণ্ডায় তোমরা নিজেদের করো আঘাত

রক্তে ভিজে উড়োনিজেদের শক্তিতে যদি থাকে বিশ্বাস

তাহলে করো না বিনয়

এ কারণেই যে, তুমি গতানুশোচনা করবে এ বয়সে কারাপালের

দরজায় ঠুকা দিয়ে

দিল্লীর মাটি কি একজন শাহ মুহাদ্দিস দেহলভীকে জন্ম দিতে পারে না, যিনি আবার ভারতীয় মুসলিমদের ভুলে যাওয়া জিহাদের অনুশীলনীর শিক্ষা দিবেন ও তাদের উদ্বুদ্ধ করবেন জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে? সেই দলের কি আর কোনও উত্তরাধিকারী নেই যারা বালাকোটে নিজেদের রক্তেসিক্ত করেছিলো, যাদের কুফরি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়াবার সাহস আছে ও যাদের সাহস আছে আল্লাহর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করার? উত্তর প্রদেশে কি এমন কোনও মা নেই যারা তাদের সন্তানদের এমন ঘুমপাড়ানি গান শুনাবে যা শুনে তাদের সন্তানেরা বাজার, পার্ক ও খেলার মাঠে যাওয়ার পরিবর্তে শামিলির যুদ্ধক্ষেত্র মঞ্চস্থ করবে? শায়খুল হিন্দের পরবর্তীরা কি আজীবনের জন্য হিজরত এবং জিহাদ পরিত্যাগ করলো? বিহারের মাটি কি এতোই অনুর্ভর হয়েছে যে আযিমাবাদের মুজাহিদীনদের মতো একটি দল তৈরি করতে তারা অক্ষম? কোন ধর্মদ্রোহীর বদ নজর বাংলার মাটি দগ্ধ করেছে, যার ফলে ইতিহাস আরেক জিরাজউদ্দৌলা প্রত্যক্ষ করতে পারছে না? ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিমগণ যে পুরোপুরি ভুলে গেছে মহিশূরের সিংহের সেই কথা, যা আজও ধর্মদ্রোহীদের ভয়ে কাঁপায়- “সিংহের একদিনের জীবন শিয়ালের হাজার বছরের জীবনের চেয়েও শ্রেয়। গুজরাটের মাটিতে কি এমন হলো যেখানে আগে কুফর ও শিরকের বিরুদ্ধে তাকবীরের আওয়াজ উঠত, যা আজও ওঠে; তবে কেন তা সোমনাথকে ভয়ে কম্পিত করে না? এসব প্রশ্ন ইতিহাসের শিক্ষার্থীদের অবশ্যই ন্যায়সঙ্গতভাবে ভারতের মুসলিমদেরকে করতে হবে।

আজ সারাবিশ্বে যখন জিহাদের ডাক দেয়া হচ্ছে এবং এমন সময় যখন প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলিমরা তাদের নিজ ভূমিতে জিহাদ শুরু করে দিয়েছেন কুফর ভিত্তিক ব্যবস্থা সমূহের মূলোৎপাটন করতে। তাই আজ শুধুমাত্র আলীমদেরকে প্রশ্ন করা ছাড়াও বিশ্বব্যাপী জিহাদের নেতৃবৃন্দের ভারতের সাধারণ মুসলিমদের এই প্রশ্ন করার অধিকার আছে যে, ভারতের সেই মুসলিমরা কোথায়? ইতিহাস যাদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় যে তারা প্রতি যুগে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সত্যের পতাকা আরোহন করেছিলেন? ভারতের সেই আলীমরা কোথায়? যাদের পূর্ববর্তীরা সবচেয়ে কঠিন অগ্নি পরীক্ষায় পড়া সত্ত্বেও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিত্যাগ করেননি? কেনো ভারতীয় মুসলিমরা জিহাদের ময়দানগুলো থেকে পুরোপুরি অনুপস্থিত?

হে উম্মাহর যুবকেরা, হে মুহাম্মাদ সা.-এর ভারথীয় অনুসারীরা, দিল্লীর জামে মসজিদের অবস্থান স্মরণ করিয়ে দেয় তার অতীতের কথা। এ জামে মসজিদের সামনে যে লালকেল্লা দাঁড়িয়ে আছে- এই সেই একই লাল কেল্লা যেখানে মুসলিমদের পতাকা উড়েছে শত শত বছর জুড়ে, তা থেকে হিন্দুরা আজ আপনাদের রক্তের অশ্রু ঝরায় এবং দাঙ্গায় হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে আপনাদের রক্ত প্রবাহিত করাকে সস্তায় পরিণত করেছে। আপনাদের বিজয়ের প্রতীক “কুতুব মিনার” কি এই বার্তা পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট নয় যে এই মসজিদই আজীবন শাসন করবে এই ভুমি যা থেকে মুসলিমরা একবার নেমেছিলো? এই মসজিদ এবং যারা এই মসজিদের ইবাদত করেন তারাই এখানের কর্তৃত্বে থাকবে। তারা সেখানের শাসক থাকবে। কারণ তারাই আল্লাহতে বিশ্বাস করেন যেখানে বাকীরা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে।

আর যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে তারা কখনও বিশ্বাসীদের উপর শাসক হতে পারবে না। ধর্মদ্রোহীরা কখনও বিশ্বাসীদের শাসন করতে পারে না। আল্লাহর শত্রুরা কখনও আল্লাহর বন্ধুদের চেয়ে বেশী সম্মানিত হতে পারে না। কীভাবে কেউ আপনাদের রক্তপাতের ও জাতিগত নির্মূলকরণের ভয় দেখাতে পারে? আপনারাই পানিপথের রণক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন- একবার নয় বরং কয়েকবার। আল্লাহ আপনাদেরকে বুদ্ধি দিয়েছেন। নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিন আপনাদের জন্য কি ভালো ছিলো। পানিপথের রক্তক্ষয় না আহমেদাবাদ ও সুরাতের দাঙ্গায় রক্তক্ষয়? কারা বুদ্ধিমান। যারা আমেরিকার কাছে মাথা নতহয়ে নতি স্বীকার করে তারা?

নাকি যারা এ যুগের ফিরাআউনের মোকাবিলা করে শামিলির রণক্ষেত্রে? নাকি তারা, যারা কার্যালয় ও পদবী গ্রহণ করেছে মুসলিমদের আদর্শিকভাবে তাদের দাসত্ব করার বিনিময়ে বা যারা স্বেচ্ছায় ফাঁসির কাষ্ঠে গিয়েছে স্বাধীনতা ও সম্ভ্রমের জন্য? প্রথম উল্লিখিতরা আপনাদের আদর্শ? না যারা তাদের জীবন কাটিয়ে দিয়েছে মাল্টার কারাগারে। যাদের শূলে চড়ানো হয় জলন্ত লোহার রডে। যাদের মাদ্রাসাগুলি বিপদে আপতিত করে এবং তাদের পদ কুরবানী করে।

হে মুসলিমগণ, দুর্বলতা আপনাদের অজুহাত হওয়া উচিৎ নয়। আমার মুসলিম ভাইয়েরা, এটা এমন একটি বিষয় যা অনুধাবন করা প্রয়োজন। একজনের নিঃশ্বাস ধরে রাখাটাই জীবনের সব কিছু নয় ৷ জীবনের সবটুকুই সম্ভ্রম ও উৎসাহে পরিপূর্ণ। কোনও জাতি কখনও তাদের শেষ নিঃশ্বাস ফেলে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের সম্মান ও উৎসাহ বজায় রাখে। কিন্তু যদি এই দুই অংশ বাদ পড়ে যায়, তাহলে সেই জাতির মৃত্যু অনিবার্য, যদিও বাহ্যিকভাবে তা দেখে জীবিত মনে হতে পারে এবং আরও হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারে।

এটাই সেই অন্তর্নিহিত রহস্য যা মহিশূরের সিংহ আপনাদেরকে উপলব্ধি করাতে চেয়েছিলেন ‘সিংহের একদিনের জীবন শিয়ালের হাজার বছরের জীবনের চেয়েও শ্রেয়।' ধর্মীয় স্বাধীনতার অর্থ যদি এই হয় যে, বাহ্যিক কিছু ইবাদত করা যাবে, কিন্তু কুফরের দাসত্ব করতে হবে। তাহলে ভুলে যাবেন না দিল্লী ও লাখনৌর সেই ধর্মভীরু পুরুষেরা, যারা নিজেদের আবাস ত্যাগ করে ধর্মদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বালাকোটে শাহাদাতকে বরণ করে নিয়েছেন। তারাও এই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারতেন। শামিলির মুজাহিদীনরাও একই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারতেন। কিন্তু ফকিহ ও হাদিস বিশারদরা শামিলির রণক্ষেত্রে ব্রিটিশদের মোকাবিলা করেছিলেন। হে মুসলিম উম্মাহ'র যুবকেরা!

আল্লাহ সুব. পবিত্র কুরআনে বলেন-

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بَعْضِ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

আল্লাহ তায়ালা যদি (যুগে যুগে) একদল লোককে দিয়ে আরেকদল লোককে শায়েস্তা না করতেন, তাহলে এই ভুখণ্ড ফিতনা ফাসাদে ভরে যেতো, (কিন্তু আল্লাহ তায়ালা চাননি, কেননা) আল্লাহ তায়ালা এ সৃষ্টিকুলের প্রতি বড়োই অনুগ্রহশীল।” [সুরা বাকারা- ২৫১]

তার মানে এই যে যদি জিহাদ না থাকতো তবে সারাবিশ্ব ফাসাদে ভরে যেতো। পৃথিবীর কোনও কিছুই তার প্রাকৃতিক অবস্থানে থাকতো না। জিহাদ ব্যতীত মানুষ তার অস্তিত্বের উদ্দেশ্য থেকে বিপথগামী হয়ে যায়। তার রক্তক্ষরণ করা হয়। সর্বত্র অন্যায়-অবিচার প্রাদুর্ভূত হয়। দুর্বলদের অধিকার বঞ্চিত করা হয়, আর সবলরা এমন আচরণ করে যেন তারা প্রভু বনে গেছে। ধনীরা গরীবদের দাসে পরিণত করে। আমার রব বলেন, ‘তাহলে এই ভূখণ্ড ফিতনা ফাসাদে ভরে যেতো।' ভুলবেন না যে আল্লাহর সুব. বিধানের পরিবর্তে মানব রচিত ব্যবস্থা দ্বারা বিশ্ব পরিচালনা করার চেয়ে বড় কোনও ফাসাদ নেই ।

যদি তাই ঘটে তবে ফাসাদ বাকী সব কিছুর উপর জয় লাভ করবে। মানুষের কথা বাদই দিলাম, এমনকি পশুপাখিরাও বিলুপ্তির সম্মুখীন হবে। জমি ফসল উৎপন্ন করা বন্ধ করে দিবে। কেন? তা এ কারণেই যে পৃথিবীটা আল্লাহর পৃথিবী।

পৃথিবী আল্লাহর সুব. নির্দেশ মেনে চলে। যদি এ পৃথিবীতে আল্লাহর কিতাব দ্বারা শাসন করা না হয়, আর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মানব রচিত সংবিধান অনুসারে...। যদি আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা বাদে অন্য কোনও ব্যবস্থা এই পৃথিবীতে জারী করা হয় পৃথিবী বেদনায় কিলবিল করবে। তা ক্রোধে অন্ধকারে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। পর্বতমালা ভয় কাঁপতে থাকবে পৃথিবীতে আল্লাহর বিধান অমান্য করায়। বিশ্ববাসীরা যখন তাদের শাসনকর্তা ও প্রতিপালককে ছেড়ে আমেরিকা ও ব্রিটেনকে তাদের শাসনকর্তা হিসেবে মেনে নেয়, তাতে মহাসমুদ্রগুলোও ক্রুদ্ধ হয়। আজ আমেরিকা ও জাতিসংঘ যে আইন পাস করে তা জারী করা হয় অথচ সামান্যতমও ভ্রুক্ষেপ করা হয় না আল্লাহর সুব. আইনের প্রতি।

 

যদি জিহাদ পরিত্যাগ করা হয়, ভূখণ্ড ফাসাদে ভরে যাবে। শুনুন! শুধুমাত্র পুরুষ নয়.... শুধুমাত্র পশুপাখি নয়... শুধুমাত্র শস্য ও পানি ফাসাদে ভরবে না। এমনকি ফুলেরাও তাদের সুগন্ধি থেকে বঞ্চিত হবে। ফুলকুঁড়ি তাদের সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত হবে। ফলমূল তাদের মধুরতা ও স্বাদ হারাবে। না কোনো খাটি দুধ পাওয়া যাবে, না পাওয়া যাবে বিশুদ্ধ পানি। হ্যাঁ, এমনকি বিশুদ্ধ পানিও! প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য শূণ্য করে, রাসায়নিক মিশ্রণ করে ও বোতলজাত করে আপনাদের এসবের উপর নির্ভরশীল করা হবে। আমার রব যা ঘোষণা করেছেন তা কতই না সঠিক- “তাহলে এই ভূখণ্ড ফিতনা ফাসাদে ভরে যেতো... এমনকি বায়ু, জীবনের মৌলিক শর্ত, তার প্রাকৃতিক অবস্থায় বিরাজমান থাকবে না। যদি আপনারা জিহাদ পরিহার করেন..... । যদি পৃথিবীতে আর খিলাফাহ বহাল না থাকে...। যদি এই পৃথিবীতে ইসলামী ব্যবস্থা বহাল না থাকে...। যদি পৃথিবীতে প্রাকৃতিক ব্যবস্থা বহাল না থাকে..। যদি এই পৃথিবী আল্লাহর সুব. কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করা না হয়, যা তিনি সুব. তার প্রিয় নবী সা.-এর প্রতি নাযিল করেছেন পৃথিবীর সমস্ত প্রকৃতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিষ্কাশন করতে এবং প্রাকৃতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে- যা হচ্ছে খিলাফাহ । তাহলে ভুখণ্ড ফাসাদে ভরপুর হয়ে যাবে। তিনি সুব. বলেন-

“তিনিই হচ্ছেন সেই মহান সত্তা, যিনি তাঁর রাসুলকে (যথার্থ) পথনির্দেশ ও সঠিক জীবন বিধান দিয়ে পাঠিয়েছেন, যাতে করে আল্লাহর রাসুল (দুনিয়ার) অন্য সব বিধানের ওপর একে বিজয় করতে পারেন, (সত্যের পক্ষে) সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।

তিনিই আল্লাহ যিনি তার রাসুল সা.-কে পথনির্দেশ ও এই ব্যবস্থা দিয়ে পাঠিয়েছেন, যার ভিত্তি সত্য। তিনি সুব, তাকে সা. জীবন বিধান দিয়ে পাঠিয়েছেন, যার ভিত্তি সত্য, যাতে করে আল্লাহর রাসুল (দুনিয়ার) অন্য সব বিধানের উপর একে বিজয়ী করতে পারেন। যে ব্যবস্থা এর বিপরীত, যে বিধান এর বিপরীত।

তা অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে ও ইসলামকে এর উপর বিজয়ী করতে হবে। যদি কোনও শক্তি সে পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় তবে এ ব্যাপারে আমাদেরকে পরিষ্কার নির্দেশ দেয়া হয়েছে-

“(হে ঈমানদারগণ) তোমরা কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না আল্লাহর যমীনে (কুফরির) ফিতনা বাকী থাকবে এবং দ্বীন সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর তায়ালার জন্যেই (নির্দিষ্ট) হয়ে যাবে.....।”

 

তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো যারা এই ব্যবস্থাকে বাঁধা প্রদান করে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের শক্তি সন্দোহাতীতভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয় ও তাদের আধিপত্যের সমাপ্তি ঘটানো হয়। তারপর সারাবিশ্ব জুড়ে জীবন বিধান হবে আল কুরআন। কিন্তু কোনও ধর্মদ্রোহীকে জোরপূর্বক শাহাদাহ পাঠ করাবেন না। এটা তার পছন্দ। এটা তার সিদ্ধান্ত যে সে একজন মুসলিম হবে নাকি তার পুরাতন ধর্ম পালন করবে। যেহেতু এই পৃথিবী আল্লাহর, তাই এতে আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা অতীব জরুরী। এটা জরুরী এ কারণেই যে, অবিশ্বাসীরাও প্রাকৃতিকভাবে এতে জীবনযাপন করতে পারবে ও পৃথিবী ফাসাদমুক্ত হবে। যদি আপনারা জিহাদ পরিহার করেন বা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ না করে, খিলাফাহ বহাল থাকবে না। সারাবিশ্ব ফাসাদে ভরে যাবে।

পৃথিবী ও তার ভূগর্বে যা কিছু আছে তা ফাসাদে ভরে যাবে। মনে রাখবেন, আপনারা মসজিদে সালাত পড়বেন কিন্তু ঐ সময়ও আপনারা বাজনার শব্দ শুনতে পাবেন, কারণ শয়তানের ব্যবস্থাও এ পৃথিবীতে প্রভাবশালী। পৃথিবীতে এতো পরিমানে ফাসাদ ছড়াবে যে পরিবেশও তার বিশুদ্ধতা ধরে রাখতে পারবে না। পরিবেশ দূষিত ও পরিবর্তন করা হবে। সন্তানরা মাতাপিতার অবাধ্য হবে। “ভূখণ্ড আসলেই ফিতনায় ভরপুর হয়ে যাবে!” ভাই ভাইকে খুন করবে। মায়ের মমতা মায়েদের থেকে উঠিয়ে নেয়া হবে। সবকিছু ফাসাদে ভরে যাবে। এমনকি ভালোবাসাও বিশুদ্ধ থাকবে না। প্রতিবেশীরা অনিষ্টপ্রবণ হবে। সমাজের সম্মানিত বৃহৎ অংশ- যেমন আলিমরা; তাদেরকে অসম্মান করা হবে। আমার সর্দার সা. এই ফাসাদকে বর্ণনা করেছেন সংক্ষিপ্ত ও যথাযথভাবে। তিনি সা. বলেছেন-

“প্রথমে নবুওয়াত থাকবে যা বহাল থাকবে যতদিন আল্লাহর সুব ইচ্ছা, তারপর তার সমাপ্তি ঘটবে। তিনি সা. বলেছেন তারপর নবুওয়াতের আদলে খিলাফাহ থাকবে যা বহাল থাকবে যতদিন আল্লাহর সুব. ইচ্ছা, তারপর তাতেও সমাপ্তি ঘটবে। এই পর্যায়ের পর স্বৈরশাসিত রাজতন্ত্র থাকবে যা বহাল তাকবে যতদিন আল্লহার সুব ইচ্ছা, তারপর তারও সমাপ্তি ঘটবে। পরবর্তীতে পৃথিবীতে ফাসাদের পর্যায় আসবে, যারপর খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হবে।”

আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ইসলামী খিলাফাহর অবসানের পরের পর্যায়টাই হচ্ছে “ভূখণ্ডে ফাসাদের' যুগ। সর্বত্র ফাসাদ বিরাজ করছে। বাণিজ্য সুদের ফাসাদে ভরপুর। বিচারবিভাগ মানব রচিত আইনের ফাসাদে ভরপুর। নবী সা. এর এই হাদিস আমাদের সুসংবাদ প্রদান করে যে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হবে এই পর্যায়ের পর, যার মাধ্যমে পৃথিবীকে ফাসাদ থেকে পবিত্র করা হবে। পৃথিবীতে ফাসাদের সমাপ্তি ঘটবে। ভূমি আবারও ফসল উৎপাদন করা শুরু করবে। সমৃদ্ধি পৃথিবীতে ফিরে আসবে। দুর্বলরা ন্যায়বিচার পাবে ও প্রাপ্যরা পাবে তাদের অধিকার। সমৃদ্ধি এতো মাত্রায় হবে যে ভিক্ষা বা দাতব্য গ্রহণ করার মতো কেউ থাকবে না ।

ওহে যারা নবী সা.-কে ভালোবাসেন! সময় কি আসলেই ঘনিয়ে আসেনি যখন আমরা দেখবো আমাদের সর্দার নবী সা.-এর কথাগুলো পূর্ণ হতে? এই বিশ্বে আরেকবার খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মুহাম্মাদ সা.-এর অনুসারীরা রণক্ষেত্রে এসে গেছে তাদের জীবন বিসর্জন দিতে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠাকরণে। এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকরণে সবচেয়ে বড় বাধা আমেরিকা আফগানিস্তানে তাদের জখম চাটছে। যারা আল্লাহর সুব. জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করে তারা আল্লাহর সাহায্যে আমেরিকান প্রযুক্তির সর্বনাশ করে দিয়েছেন। ইরাকের পর, খুরাসানের কালো পতাকা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নবীদের আ. মুজাহিদীনরা তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেছেন খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। ভূমি, বরকতময় ও বিজয়ের ভূমি সিরিয়ার কালো পতাকাবাহী। আল্লাহ সুব. এই জিহাদকে এমন বরকত দ্বারা অলংকৃত করেছেন যে এতো স্বল্প সময়ের মধ্যে মুজাহিদীনরা এই পর্যায়ে চলে গেছেন যে তারা নুসাইরিদের হাতে থেকে মুসলিমদের মুক্ত করার কিনারে পৌঁছে গেছেন। আমেরিকানরা ও অবিশ্বাসী বিশ্বের অন্যান্য শক্তিধররা তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হতে দেখে অভিঘাতপ্রাপ্ত। আল্লাহর সুব. সাহায্য, আল-কায়েদা ও অন্যান্য মুজাহিদীনরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন। আফগানিস্তান থেকে কয়েকটি দল সিরিয়ায় গিয়েছে ও তারা সেখানে জিহাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ওহে যারা ভারত ৮০০ বৎসর শাসন করেছেন। হে পৌত্তলিকতার অন্ধকারে তাওহীদের মশালধারীরা! আপনারা কেমন করে ঘুমিয়ে থাকতে পারেন যখন সারাবিশ্বের মুসলিমরা জাগ্রত হচ্ছে! যদি মুসলিম বিশ্বের যুবকেরা রণক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে পারে “হয়তো শরীআহ নয়তো শাহাদাহ” স্লোগানে ও তাদের জীবনের ঝুঁকি নিতে পারে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনারা কেমন করে তাদের পেছনে পড়ে থাকতে পারেন? উসমানী খিলাফাহ রক্ষার্থে আপনারাই জিহাদে নিযুক্ত ছিলেন। যদি ফিলিপাইন থেকে মরেক্কোর মুসিলমরা আশাবাদী হতে পারে, তবে আপনাদের নিরাশ হওয়ার কোনও কারণ থাকতে পারে না। উঠে দাঁড়ান!

জেগে উঠুন! সার্বজনীন জিহাদে অশংগ্রহণ করুন। আমেরিকার প্রাসাদ ধ্বসে চূড়ান্ত ধাক্কা দিতে উঠে পড়ন। এই জিহাদ কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এই জিহাদে জীবন উৎসর্গ করা হচ্ছে সর্বত্র আমেরিকা ও তার দোসরদের পরাজিত করতে।

আমার মুসলিম ভাই! সামনের দিকে অগ্রসর হোন! শাসনকার্যের নিয়ম আপনাদের জন্য নতুন কিছু নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী আপনারা সারাবিশ্বকে শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে শাসন করতে হয়। আপনারা মুসলিমদের সম্মান ও গৌরবের পতাকা বহন করেছেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। সেই মানসে আবারও জ্বলে উঠুন! আবারও সেই ঝড়কে পুনরুজ্জীবিত করুন যা আপনাদের অন্তরে গর্জন করেছে! সময় এসেছে সেই ধাতুনিঃস্রব জিহাদের অগ্নিশিখা দিয়ে প্রজ্জলনের, যা আপনারা নিজেদের অন্তরে দমিত করে রেখেছেন সেই ১৮৭৫ সাল থেকে। এখন সময় দেবত্বের দাবীদারদের দেখানোর যে আপনাদের শিরায় শিরায় এখনও মুহাম্মাদ বিন কাসিম এর রক্ত দৌড়ে।

এটা সময় তাদের দেখানোর যে মুসলিম মায়েরা গাওরী ও গাযনাভীর কাহিনি এখনও তাদের সন্তানদের কাছে বর্ণনা করেন। এটা সময় তাদের দেখানোর যে, আওরঙ্গজেব এর লোককাহিনি এখনও ভারতীয় মুসলিমদের বিবেক জাগ্রত করে এবং মহিশূরের সিংহের বিখ্যাত মন্তব্য এখনও ভারতীয় মুসলিম যুবকদের প্রণোদিত করে মৃত্যুর জন্য- একটি সম্মানিত মৃত্যু।

সারা বিশ্বে আজ মুসলিমরা জেগে উঠেছে কুফরি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। জিহাদের রঙ্গভূমি এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ভারতীয় মুসলিমদের জন্য। জিহাদের রঙ্গভূমি ভারতীয় মুসলিম যুবকদের অপেক্ষায়। তারা অপেক্ষা করছে আওরঙ্গজেব ও টিপুর সন্তানদের জন্য। মনে রাখবেন, অবিশ্বাসী বিশ্ব যেকোনো মূল্যে আমাদের ধ্বংস করতে চায়। চাই তা গণহত্যার মাধ্যমে হোক বা আমাদের জীবন্ত দগ্ধকরণের মাধ্যমে হোক বা আমাদের সম্পদ লুট করার মাধমে হোক বা আমাদের বোন ও মেয়েদের সম্ভ্রমহানীর মাধ্যমে হোক। অবিশ্বাসী বিশ্ব সর্বত্র মুসলিমদের ধ্বংস করতে চায়; চাই বোমাবাজি করে তাদের ধ্বংস করা হোক বা ড্রোন হামলার মাধ্যমে হোক বা তাদের দারিদ্র্যতার বেড়ি পরিয়ে হোক বা দাঙ্গা উসকানি দিয়ে হোক। নবী সা. বলেছেন- “কাফেররা একটি একক জাতি।”

আর তাই তারা আমাদের ধোঁকা দিতে মায়াকান্না দেখিয়ে থাকে। অন্যথায় বাস্তবে তারা সবাই আমাদের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ। তারা সবাই একমত আমাদের প্রজাগুলি ধ্বংসকরণে ও তাদের দীনবিমুখকরণে। মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে জিহাদের ডাক আসছে ও গোষণা করা হচ্ছে নতুন এক উদয় ঘটেছে মুসলিম উম্মাহর। সম্মানিত বোনেরা যারা তাদের নিজ গায়ে বিস্ফোরক বাঁধেন এবং শত্রুদের সারিতে ঢুকে পড়েন, নিজেদের উৎসাহ জাগানোর জন্য তারা আপনাদের অনুপ্রেরণা। তারা ভারতে তাদের ভাইদের কাছে এই বার্তা পাঠাচ্ছেন যে, আল্লাহ সুব. জিহাদে এমন অসাধারণ শক্তি দান করেছেন যে ৪২টি কাফের দেশ তাদেরকে সম্মিলিতভাবে পরাজিত করতে পারছে না। আমেরিকা তার সকল ড্রোন ও কৃত্তিম উপগ্রহ নিয়ে না পেন্টাগনে নিরাপদ না বাগ্রামে। মাত্র কিছুসংখ্যক শাহাদাত- অন্বেষণকারী যুবক তাদের নিরাপদ স্থাপনগুলোকে ধ্বংস করে দিতে পারে আল্লাহর সুব. সাহায্যে। শুধু একবার তাকিয়ে দেখুন কি ঘটছে ইয়েমেন ও ইরাকে। ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস এর ভূমির যুদ্ধের গানের প্রতিধ্বনিত থেকে অনুপ্রেরণা নিন ।

আফগানিস্তান থেকে তাকবীরের প্রতিধ্বনি শুনুন । আপনাদের ভাইয়েরা মরনাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত হয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করছেন রণক্ষেত্রে। তারা এ জীবন বিক্রি করছেন জান্নাতের জন্য। তাদের অন্তর্ভূক্ত শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক, বৃদ্ধ, এমনকি মা ও বোনেরা। তারা সবাই আপনাদের অপেক্ষায়। তারা সবাই ভারতীয় মুসলিমদের সাথে আছেন। আমি মুহাম্মাদ সা.-এর রবের শপথ নিয়ে বলছি, আপনারা যদি একবার জিহাদের জন্য দাঁড়িয়ে যান, ফিলিপাইন থেকে মরেক্কোর মুজাহিদীন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপানদের সাথে দাঁড়াবেন। মক্কা, মদিনা, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিশর, লিবিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো এবং বিশ্বের প্রতিটি কোণের মুজাহিদীনরা আপনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন যেভাবে তারা এই অঞ্চলের মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন অতীত ইতিহাসের ন্যায়। আফগান ভূখণ্ড আপনাদের সাহায্যের ডাকের অপেক্ষায়। আপনারা দেখবেন যেখানে আপনাদের অশ্রু পড়ে সেখানে মুজাহিদীনরা তাদের রক্ত উৎসর্গ করবেন। যে হাত আপনাদের ক্ষতি করতে চাইবে তা একেবারে কেটে ফেলা হবে। আমি হুনাইনের রবের শপথ নিয়ে বলছি, যারা আপনাদের সন্তান ও নারীদের জীবন্ত দগ্ধ করেছিলো, মুজাহিদীনরা তাদের আবাসকে পানিপথের রণক্ষেত্রে পরিণত করবেন। শুধুমাত্র একটি বার আপনাদের ভাইদের আহ্বান জানান। তারা আপানদের জন্য তাদের সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করবেন কারণ তারা তাদের জীবন বিক্রি করে দিয়েছেন যাতে করে মুহাম্মাদ সা.-এর উম্মাহ তাদের হারিয়ে যাওয়া সম্মান ফিরে পান এবং নিজেদের মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে একমাত্র আল্লাহর সুব. কাছে আত্মসমর্পণ করে নিজেদের অর্পণ করেন। তারা এই পথ বেছে নিয়েছেন এ কারণেই যে, এই উম্মাহ বিদ্রোহ ঘোষণা করছে অবিশ্বাসীদের ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবং নিজেদের জীবন গঠন করে নবী সা.-এর ব্যবস্থা অনুসারে ৷

হে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের সন্তানরা! হে আওরঙ্গজেব ও গজনবীর উত্তরসূরীরা, উঠে দাঁড়ান ও জিহাদের ময়দানের দিকে অগ্রসর হোন একজন বোনের পর্দা কেড়ে নেওয়ার আগে...। মুসলিমরা আবারও একত্রে জীবন্ত দগ্ধকরণের আগে...। আবারও খিলাফাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকরণে জিহাদের রঙ্গভূমির দিকে অগ্রসর হোন। সার্বজনীন জিহাদের বাহিনীতে যোগ দিন! আল্লাহ সুব. আপনাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহ সুব. আপনাদের সাহস যোগাবেন। আপনারা যদি এই পথ বেছে নেন, আল্লাহ সুব. আপনাদের কারণে এই জাতিকে সম্মানিত করবেন।

আমাদের শেষ দুআ এই যে সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি সারা জাহানের রব।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হে আল্লাহর সৈন্যদল.......

 

আমরা আমাদের বিশ্বাস থেকে কখনো সামান্য সময়ের জন্যও বিচ্যুত হবো না,আমাদের চলার পথ কোরআনের আলোয় আলোকিত ।

 

হে আল্লাহর সৈন্যদল! আমরা সত্য পথের উপর দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হচ্ছি। হে পবিত্র নগরীর শিংহসাবকেরা! তোমরা আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দাও যে, আমরা সম্মুখে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবো, আমরা কখনোই হার মানবো না ।

 

যতক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে হে আল্লাহর সৈন্যদল; (আমরা শীঘ্রই তোমাদের সাথে মিলিত হবো তোমাদের ডাকে সাড়া দিতে।

 

এবং নিঃসন্দেহে মসজিদুল আকসা একদিন আমাদের কাছে ফিরে আসবে। আর এ প্রত্যাবর্তন চিরদিনের জন্য আমাদের হবে।

 

আমার মহিমান্বিত রবের জান্নাতের দিকে, যেখানে শহীদগণ অবস্থান করবে। আমরা তার সেই পথ থেকে কখনোই বিচ্যুত হবো না ।

 

আমরা এগিয়ে যাবো এমনভাবে, যেভাবে যুদ্ধাগণ আমাদের শত্রুকে নিঃশেষ করে দেয়। (আর) মহান প্রভুর কোরআন হলো আমাদের এগিয়ে চলার শক্তি ।

 

এবং এটি আমাদের নিকট অবতীর্ণ হয়েছে এক নতুন বার্তা নিয়ে (যে কিয়ামতের) ঐ দিবস হবে শহীদগণের জন্য সাফল্যের দিন।